বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম

 

বিশ্ববাজারে কমলেও দেশের বাজারে উলটো সয়াবিনের দাম বাড়ছে। গত এক মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলে ৩৩৩ ডলার কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। উলটো ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য তত্পর।

 

গত ৯ জুন ভোজ্য তেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবিল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ সাত টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। অথচ এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমার উদাহরণ টেনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জুনে দর সমন্বয়ে সয়াবিনের দাম বাড়বে না। নতুন দর অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ২০৫ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৯৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। এর আগে গত ৫ মে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বেড়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

 

 

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পামঅয়েলের দাম বেশি। যেহেতু দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদার বড় অংশই আমদানি করে মেটানো হয়, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দর এখন নিম্নমুখী।

 

সংশ্লিষ্টরা বলেছে, যদি প্রতি মাসের শেষে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই দর নির্ধারণ করা হয়, তাহলে কীভাবে জুনের দর সমন্বয়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হলো। এখানে কি ভোক্তার স্বার্থ দেখা হয়েছে। কাদের চাপে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হলো? আবার জুনের দর সমন্বয়ে পামঅয়েলের দাম লিটারে ১৫ টাকা কমানো হলেও বাজারে তার কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব নেই। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পামঅয়েলের দাম আরো বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি লিটার খোলা পামঅয়েল বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। যা গতকাল বিক্রি হয় ১৬৬ থেকে ১৭৪ টাকায়। সরকারের এ বিপণন সংস্থার হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে খোলা পামঅয়েলের দাম ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ আর খোলা সয়াবিনের দাম ৫২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেড়েছে।

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত দুই বছর ধরে ভোজ্য তেলের বাজার বাড়তি। বিশ্বে করোনা মহামারির প্রভাব শেষ না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সয়াবিন. পামঅয়েলের বাজারের অস্থিরতা দেখা দেয়। কিন্তু গত দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী সয়াবিন ও পাম অয়েলের দর নিম্নমুখী। একদিকে বিশ্বব্যাপী সয়াবিন, পামঅয়েলের উত্পাদন বাড়ছে, অন্যদিকে চাহিদা কমেছে। ফলে তেল কোম্পানিগুলো তাদের মজুত ছেড়ে দিচ্ছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া তাদের পামঅয়েল রপ্তানি নীতিমালা শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। গত ২২ এপ্রিল দেশটি পামঅয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরে সেদেশের পামচাষিদের বিরোধিতার মুখে গত ২৩ মে রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। শুধু তাই নয়, রপ্তানি স্বাভাবিক করতে তাদের রপ্তানি নীতিমালাও শিথিল করার ঘোষণা দেয়। এতে দেশটি আগের চেয়ে পামঅয়েল রপ্তানি বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ বিপণনবর্ষে সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়বে ৪ শতাংশ। আর পাম অয়েলের উৎপাদন বাড়বে ৩ শতাংশ। বাজারসংক্রান্ত সব পূর্বাভাসেই সয়াবিন, পামঅয়েলের উৎপাদন বাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ফলে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা সয়াবিন, পামঅয়েলের বিশ্ববাজার এখন নিম্নমুখী।

 

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) গত শুক্রবার প্রতি টন সয়াবিন তেল কেনাবেচা হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ ডলারে। যা আগের দিনের চেয়ে টন প্রতি ৮২ ডলার কম। শতাংশের হিসেবে যা ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম। আর গত এক সপ্তাহে কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। সয়াবিনের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে পামঅয়েলের দামও নিম্নমুখী। সিবিওটিতে গত ১৭ জুন প্রতি টন পামঅয়েল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ ডলারে। যা একদিন আগে ছিল ১ হাজার ৩২৮ ডলার। আর এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩৬০ ডলারে।

 

বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর প্রকাশ করে ইনডেক্স মুন্ডি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১১ জুন পর্যন্ত প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৭৫ ডলার। এরআগে চলতি বছরের মার্চে ছিল ১ হাজার ৭৭৭ ডলার, এপ্রিলে ১ হাজার ৬৮৩। আর মে মাসে তা ছিল ১ হাজার ৭১৭ ডলার। অন্যদিকে, ১১ জুন পর্যন্ত প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের বুকিং দর ছিল ১ হাজা