সকল দলমত নির্বিশেষে সকলের দ্বার উন্মুক্ত: প্রধানমন্ত্রী

hasina
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে নাম দেওয়া হয় পূর্ববাংলা আওয়ামী লীগ সকল দলমত নির্বিশেষে সকলের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। ঠিক এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনও পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির সাত মাসের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটি বৈরি মনোভাব দেখা যায়। বাংলাভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাসহ আর্থসামাজিভাবে আমাদের শোষণ, নির্যাতন-নীপিড়ন শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের সংগঠন। আওয়ামী লীগ সব সময়ই এদেশের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে। কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছে।

বাংলাদেশ সৃষ্টিলগ্ন থেকে সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, পাকিস্তান নামক দেশটি যেভাবে আমাদের শোষণ করে যাচ্ছিল। ২৩ বছরের সংগ্রাম ও জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেওয়া।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে নাম দেওয়া হয় পূর্ববাংলা আওয়ামী লীগ। সকল দলমত নির্বিশেষে সকলের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে কাউন্সিল অধিবেশে আওয়ামী লীগের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সাথে যেমন স্বাধীনতা ও অধিকার জড়িত। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত হয়ে সংবিধান দিয়েছিলেন জাতির পিতা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পায়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমরা কেবল জাতির পিতাকে হারাইনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল। জয়বাংলা স্লোগান নির্বাচিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সরকারে আসে। সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ইনশাল্লাহ জনগনের সেবা করার সুযোগ পেলে অবশ্যই আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে তাহলে এদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না; রুখতে পারবে না।

মানুষের সেবা করা আওয়ামী লীগের কর্তব্য ও দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ঝড় বৃষ্টি, বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব সময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি- যখনই বাংলার মানুষ কোনো সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সহযোগিতা করেছে। এবারের সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যায়ও সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়েছে, তাদের সাহার্য্য করেছে। এটা আমাদের আদর্শ। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।