প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই প্রতিরক্ষা সংলাপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই প্রতিরক্ষা সংলাপে বসছে বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী ১১ আগস্ট ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় এ সংলাপে প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়াও সংলাপে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের দেওয়া লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) বা ঋণের আংশিক ব্যবহারের বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে সামরিক সরঞ্জামের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রতিরক্ষা সংলাপে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নেতৃত্ব দেবেন। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন ওই দেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। সংলাপে ঋণের থেকে সরঞ্জাম সংগ্রহ করা ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে সহযোগিতা, জঙ্গিবাদ দমন, যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গত ৪ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ১১ই আগস্ট দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সংলাপের আগে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বেঙ্গালুরুতে ৮-১০ আগস্ট বৈঠক করবেন। এর আগে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তৃতীয় প্রতিরক্ষা সংলাপ হয়েছিল। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্র জানায়, ভারত সামরিক খাতে তাদের দেওয়া ঋণ ব্যবহারের জন্য বেশ কয়েকবার বাংলাদেশকে তাগাদা দিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে। সেসঙ্গে প্রতিরক্ষা সংলাপ সামনে রেখে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের তালিকাও তৈরি করেছে বাংলাদেশ।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে ছিলেন, ঋণের আওতায় বাংলাদেশকে সরবরাহের জন্য ভারত বেশ কয়েকটি পণ্য বাছাই করেছে।
ভারত থেকে কী পণ্য সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ তালিকা তৈরি করেছে। তবে বেশিরভাগই সামরিক সদস্য ও সরঞ্জাম পরিবহনের গাড়ি। এর মধ্যে এপিসি এবং বড় ট্রাকও রয়েছে। প্রতিরক্ষা সংলাপে সামরিক এলওসির আংশিক ব্যবহার করা নিয়ে আলোচনা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ২০১৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফর করেন। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর তিনি নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফরে যাবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এই সফরের আগে দুই দেশের সব খাতে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্রটি খতিয়ে দেখছে ঢাকা ও দিল্লি।

২০১৭ সালে প্রতিরক্ষা খাতে সরঞ্জাম কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলারের এলওসি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে তিনটি সমঝোতাও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রতিরক্ষা খাতে একে অপরকে সহযোগিতা, দুই দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশল বিষয়ক শিক্ষা এবং ডিফেন্স স্টাফ কলেজ পর্যায়ে সামরিক খাতে কৌশল ও পরিচালন সংক্রান্ত শিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা।