যশোর চৌগাছায় পুলিশ সদস্যের বাল্যবিয়ে!

police

যশোরের চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধ অগ্রাহ্য করে স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাকে (১৬) বিয়ে করেছেন আসাদুজ্জামান পিকুল নামে পুলিশের এক সদস্য।

আসাদুজ্জামান পিকুল বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত। কনের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে রবিবার (১৪ আগস্ট) যশোর নোটারি পাবলিকের এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পুলিশ সদস্যের বাল্যবিয়ের ঘটনায় গোটা চৌগাছা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই উপজেলায় বাল্যবিয়ের ঘটনায় কনের বাবা, দাদা, নানা ও বরের মামাসহ চারজনকে ৬ মাস ও ৯ মাস করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তারা সবাই দিনমজুর বা ভ্যান চালক শ্রেণির। অথচ একজন পুলিশ সদস্য প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে কিভাবে বাল্যবিয়ে করতে পারেন? তাও আবার কাজীর কাছে না করে এফিডেভিটের মাধ্যমে। তাদের প্রশ্ন আইন কি শুধুই গরীবের জন্য?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের বড় ছেলে তৌহিদুর রহমান নয়নের (৩৬) বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিলো। পাশ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের ১৭ বছর বয়সী একটি মেয়ের সাথে। আর ৬ আগস্ট উপজেলার সলুয়া গ্রামের তাইজুল ইসলামের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে সাদিয়া খাতুনের (১৬) সাথে বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিলো তৌহিদের ছোটভাই সাতক্ষীরা সদর থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) আসাদুজ্জামান পিকুলের (২৮)।
বাল্যবিয়ের বিষয়টি একটি মাধ্যমে জানতে পেরে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা নিজে পুলিশ সদস্য পিকুলকে মোবাইলে নিজের এবং তার ভাইয়ের বাল্যবিয়ে করতে নিষেধ করেন। পরে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ, জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সিরাজুল ইসলামও মোবাইলে ওই পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলেন। সেসময় পুলিশ সদস্য পিকুল নিজে এবং তার ভাই বাল্যবিয়ে করবেন না মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি এবং ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে মোবাইলে অঙ্গীকার করেন।

তবে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও গোপনে সুযোগ সন্ধানী পুলিশ সদস্য পিকুল নিজের বড়ভাইকে বাল্যবিয়ে দেন। পরে তিনি নিজে গত ১৪ আগস্ট যশোর নোটারী পাবলিক এর কার্যালয়ে গিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন।

ঘোষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, যশোর সদর কাজী অফিসের (তবে কাজীর নাম দেননি) মাধ্যমে উল্লেখিত সাদিয়া আক্তারকে তিনি এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন। এফিডেভিটে সাদিয়া আক্তারের জন্মতারিখ ২০০৪ সালের ১৯ মে দেখানো হয়েছে। এফিডেভিটে কাজী অফিসের রেজিস্ট্রি নং- এ, বই নং ১১/২২(ক), তালিকা ৪৪০, পৃস্টা নং ২৪ এবং তারিখ আগস্ট দেখানো হয়েছে। এফিডেভিটকারী আইনজীবী হয়েছেন চৌগাছার জগদীশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও যশোর জর্জ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলিবুদ্দিন খান। অথচ ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে ইস্যু করা জন্মনিবন্ধনপত্রে বিয়ের কন্যা সাদিয়ার জন্ম তারিখ ২০০৬ সালের ১৯ মে। তার জন্মনিবন্ধন কার্ডে দেখা যায় এই জন্মনিবন্ধন রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে ২০১৬ সালের ৪ জুলাই এবং জন্মনিবন্ধন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর।
প্রশ্ন উঠেছে কাজী অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রির পর আসাদুজ্জামান পিকুল আবার কেন নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিট করলেন? আর আইনজীবীই বা কেন এই এফিডেভিট করে দিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জর্জ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সাগর বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিবাহ সংক্রান্ত কোনো আইনে এ কথা বলা হয়নি যে, ‘কাজী অফিসে বিবাহ রেজিস্ট্রি করার পর সেটা আবার নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিট করতে হবে। তিনি এটি করেছেন মানেই এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।’
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি নিজে ওই পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি এই বাল্যবিয়ে করবেন না বলে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একইসাথে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ এবং জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কাছেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ তিনি ১৪ আগস্ট এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিয়েছেন সেই কাগজপত্র আমাদের কাছে এসেছে। শুনেছি তার বড়ভাইও সেই নাবালিকাকেই বিয়ে করেছেন।

ইউএনও বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক এ বিষয়ে চৌগাছা থানায় নিয়মিত মামলা করা হবে। একইসাথে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকের কাছে পত্র দেয়া হবে।