২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি

bnp logo

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা শাখার নেতাদের কাছে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রতিটি উপজেলা/থানা/পৌর কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করবেন জেলার নেতারা। ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন প্রতিটি জেলা/মহানগরের কমপক্ষে একটি উপজেলা/থানায় কর্মসূচি পালিত হবে।

জ্বালানি তেল, পরিবহণ ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। জনসম্পৃক্ত এসব ইস্যুতে ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে সব পর্যায়ের কর্মসূচিতে স্ব স্ব জেলার কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সংসদ-সদস্য ও গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের উপস্থিত থাকাসহ ৬টি নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও মৌখিকভাবে জেলা শাখার নেতাদের জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সেসব কর্মসূচিতে জেলার নেতারা এবং ওই সব জেলার অধিবাসী কেন্দ্রীয় নেতারা ও সাবেক সংসদ-সদস্য উপস্থিত থাকবেন। পরের নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিটি ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করবেন উপজেলা/থানা/পৌর নেতারা। ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে কর্মসূচি পালিত হবে। সেসব কর্মসূচিতে উপজেলা/থানা/পৌর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

আরও বলা হয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের স্ব স্ব ইউনিটের নেতারা কর্মসূচি সফল করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। এ বিষয়ে স্ব স্ব সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সার্বিক সমন্বয় করবেন এবং ইউনিটগুলোকে নির্দেশ প্রদান করবেন। এছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে সার্বিকভাবে সমন্বয় করবেন। প্রতিটি ইউনিটের কর্মসূচি পালনের তারিখ নির্ধরণ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রেরণ করবেন।’ কর্মসূচি সফল করার এবং আন্দোলন বেগবান করার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয় ওই চিঠিতে।

জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলন শুধু বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক্ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সবাই চায় এই সরকারের পতন। বিএনপি আন্দোলনে আছে। ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু হবে।

পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, কেন্দ্র থেকে চিঠি পেয়েছি। এখন কেন্দ্রীয় নেতাসহ যারা বিগত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছিলেন, জেলা ও উপজেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করব। পরে উপজেলা ও ইউনিয়সহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো বৈঠক করবে, সেখানে জেলার ও কেন্দ্রীয় নেতারাও থাকবেন। প্রতিটি ইউনিয়নে কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করে টিম গঠন করে ভাগ করে দেওয়া হবে। পরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিট ইউনিয়ন-উপজেলায় কর্মসূচি পালন করব। অর্থাৎ কর্মসূচি সফলে যা যা করা দরকার, তা আমরা করব।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কারণ সরকার পতনের আন্দোলনকে সফল করতে এখন তৃণমূলকে দল অনুভব করছে এবং তৃণমূলও এসব কর্মসূচিতে উজ্জীবিত হবে, আরও শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে সর্বশেষ রাজধানীর নয়াপল্টনের সমাবেশের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রামে-গঞ্জে অনেক উজ্জীবিত হয়েছেন। নেতারা আশা করছেন, ধারাবাহিক কর্মসূচি সফল হবে।

তারা আরও জানান, প্রতিটি জেলা ও উপজেলার নেতাসহ যারা সংসদ নির্বাচন করেছেন বা যারা কেন্দ্রীয় নেতা, তাদেরকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে হবে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাজে-কর্মে আরও উৎসাহ পাবে, একটা স্পিরিট তৈরি হবে।

বিশেষ করে তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। তারা হাহাকার করছে, চলতে পারছেন না। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষ জানতে পারবেন বিএনপি মানুষের জন্য কাজ করছে, তাদের যে দাবি সেগুলো নিয়ে কথা বলছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশ্বাস, এই কর্মসূচি সফল হলে সরকার আরও কোণঠাসা ও দিশেহারা হয়ে পড়বে।