খুলনায় দাঁড়াতেই পারছে না বিএনপি

bnp logo

 

খুলনায় গত ১০ দিনে হামলায় বিএনপির অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। রগ কেটে দেওয়াসহ গুরুতর জখম হয়েছেন ১৮ জন। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩টি স্থানের সমাবেশ মঞ্চ। এ ছাড়া একই স্থানে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ায় ৫টি ওয়ার্ডে পূর্বনির্ধারিত সভা করতে পারেনি সংগঠনটি। সব মিলিয়ে জেলায় বিএনপি দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

 

 

এ অবস্থায় রাজপথে কর্মসূচি পালনের বিকল্প খুঁজছেন দলটির নেতারা। নেতারা বলছেন, যে ওয়ার্ডগুলোতে সভা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের মহানগর বিএনপি কার্যালয় কর্মসূচি পলন করতে বলা হয়েছে। পুলিশের পরামর্শে সংঘর্ষ এড়িয়ে বড় সমাবেশগুলো বিকল্প স্থানে করা হচ্ছে। তারপরও হামলা বন্ধ হচ্ছে না।

 

 

খুলনা বিএনপির নেতারা বলছেন, সভা-সমাবেশ ডাকলেই এমন ধারাবাহিক হামলার ঘটনা অতীতে হয়নি। তবে হামলায় তারা ভীত নন, উল্টো কর্মীদের মনোবল আরও চাঙ্গা হচ্ছে। সমাবেশগুলোতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করছে।

 

 

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত এক মাস ধরে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘরোয়া সভা করছে মহানগর বিএনপি। গত ১৭ আগস্ট ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির ঘরোয়া সভায় প্রথম হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মারধরে তাদের নারীকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। ইলিয়াস হোসেন নামের এক শ্রমিক দল নেতার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় ৩৫টি মোটর সাইকেল। হামলাকারীরা মঞ্চে উঠে কর্মীদের মারধর করে। এ সময় আহত হন নারী কর্মীরাও।

 

জেলা পর্যায়ের এক নেতা জানান, এই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৮ আগস্ট ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাস্থলে পাল্টা সমাবেশ ডাকে আওয়ামী লীগ। পরে পুলিশের অনুরোধে সেখানে সভা করেনি বিএনপি। বিকেলে মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভা হয়েছিল। পরদিন ১৯ আগস্ট যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সভাস্থলেও পাল্টা সভা আহ্বান করে আওয়ামী লীগ। পরে ওই সভাও হয়নি। একইভাবে ২৭ ও ২৮নং ওয়ার্ড বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সভাস্থলে আওয়ামী লীগ সভা ডাকায় সেখানেও বিএনপি সভা করতে পারেনি। পরে মহানগর কার্যালয়ে সভা করে দলটি।

গত ২৪ আগস্ট দৌলতপুর থানা বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় বিএল ছাত্রলীগ ও বিএনপি। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরই দৌলতপুর থানা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বিএনপির কেউ আহত না হলেও তাদের সমাবেশ মঞ্চ, মাইক ভাঙচুর করা হয়। এরপর বিএনপি কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিল, অন্যান্য আসবাবপত্রও ভাঙা হয়।

 

২৫ আগস্ট দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপির সমাবেশ থেকে ফেরার পথে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্লা খায়রুল আলমসহ ৯ জন গুরুতর জখম হন। একই দিন ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুবলীগের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন।

 

২৬ আগস্ট শুক্রবার ফুলতলা বাজারে উপজেলা বিএনপির সমাবেশস্থলে পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করে আওয়ামী লীগ। সংঘাত এড়াতে পুলিশের পরামর্শে বিএনপি সমাবেশ এম এম কলেজ মাঠে করার ঘোষণা দেয়।

 

সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা সমকালকে বলেন, প্রতিটি সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে। তারা বিএনপির মনোবল ভেঙে দিতে চায়। তবে হামলা নিয়ে বিএনপির কর্মীরা ভীত নন। প্রতিটি সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করছে।

 

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান সমকালকে বলেন, সংঘাত এড়াতে পুলিশের পরামর্শে আমরা বিকল্প স্থানে সমাবেশ করছি। সেখানে গিয়ে অথবা ফেরার পথে আমাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। হামলা চালিয়ে সমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ আমরা করবোই।

 

বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, কোথাও বিএনপির ওপর আগে হামলা হয়নি। তারা নিজেরা মারামারি করে, আবার কোথাও আগে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করে। বিএনপির হামলায় দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এখন হাসপাতালে।