৩০২ কোটি টাকা বাঁচিয়ে বিআইডব্লিউটিএর চমক

gov logo

দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কারণে-অকারণে প্রাথমিক বরাদ্দ সংশোধন করাটা যেন অলিখিত এক রীতি। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ কখনোই কমে না, উল্টো বাড়ে। এবার সেই রীতি ভেঙে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বরাদ্দ থেকে ৩০২ কোটি টাকা কম খরচ করে প্রকল্পটি শেষ করেছে সংস্থাটি। ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথ) ২য় সংশোধনী’ প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা সাশ্রয়ের বিষয়টিকে ব্যতিক্রম বলছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথ দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে চলাচল এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ, যা শেষ হয় গত জুনে। ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ১ হাজার ৬১৭ কোটি টাকায় এর বাস্তবায়ন হয়েছে। এতে ৩০২ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৪ নৌপথে মোট ১ হাজার ১০৩ লাখ ঘনমিটার খননের মাধ্যমে ২ হাজার ৩৮৬ কিলোমিটার নৌপথের নাব্য উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের নদীগুলোর মধ্যে খুলনা-বাগেরহাট-মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল, পটুয়াখালীর খাগদান ও লাউকাঠি নদী, ভোলার ভোলানালা নদী, বরিশালের কীর্তনখোলা ও পালরদি নদী; সিলেটের চলতি, সুরমা, বাউলাই ও নতুন নদী; সুনামগঞ্জের রক্তি ও রকমা নালা; নেত্রকোনার মগড়া, কংশ, ভোগাই কংশ ও ইছামতী; মাদারীপুরের আপারকুমার, মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী ও কালীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের মধুমতী ও ভৈরব; পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও দিনাজপুরের আত্রাই নদী; কুড়িগ্রামের দুধকুমার; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুড়ি ও তিতাস এবং নরসিংদীর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদ খননের মাধ্যমে নাব্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১১ সালে বন্ধ হওয়া মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি ২০১৫ সালে ড্রেজিং করে নৌ চলাচলের জন্য চালু করা হয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে এখন মোংলা বন্দরমুখী পাঁচ লক্ষাধিক নৌযান যাতায়াত করে। বর্তমানে চ্যানেলটিতে সর্বনিম্ন ১২ ফুট এবং জোয়ারের সময় ২০ ফুট পর্যন্ত পানির গভীরতা থাকে, যার প্রস্থ প্রায় ২০০-৩০০ ফুট। এর আগে নাব্য সংকটে খাগদান, লাউকাঠি, ভোলানালা, কীর্তনখোলা ও ইছামতী নদী দিয়ে মালবাহী কার্গো ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ভৈরব-ছাতক নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে শুকনা মৌসুমে হাফ মোড় দিয়ে কার্গো চলাচল করত। বর্তমানে নাব্য ফিরে আসায় ওই নৌপথে সারা বছর ফুল মোড়ে খাবার, বালু, সিমেন্ট, কয়লা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, খুলনার নোয়াপাড়া নদীবন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এ পথে গড়ে ১০০-১২০টি সার, সিমেন্ট, চাল, গম, কয়লা ইত্যাদি মালবাহী কার্গো চলাচল করে। তবে এই নৌপথে নাব্য সংকটে দীর্ঘদিন নৌ চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। পূর্ণ জোয়ারের সুবিধা ছাড়া নৌযান চলাচল করতে পারত না। ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে নৌপথে নাব্য বেড়ে বর্তমানে সারাবছর সার্বক্ষণিক কার্গো জাহাজ চলাচল করছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মৃতপ্রায় নেত্রকোনার কংশ নদীর পাগলাজোড়, মোহনগঞ্জ, বাউলাই নদীর আনোয়ার-তাহেরপুর, বরিশাল-পটুয়াখালী নৌপথের সাহেবের হাট নালা, তিতাস নদীর দাউদকান্দি-হোমনা-রামকৃষ্ণপুর, বাঞ্ছারামপুর, চলতি নদীর সুনামগঞ্জ-ডলুরা নৌপথ, নারায়ণের মেঘনা-লাঙ্গলবন্দ নৌপথ এবং মগড়া নদীর চামড়াঘাট-মদন পর্যন্ত ড্রেজিং করে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ৫৩টি নদী খনন প্রকল্পের আওতায় এই ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে মৃতপ্রায় নদীগুলোর নাব্য ফেরায় এখন নদীগুলোতে পানি থাকছে সারাবছর।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সারাদেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন ও নাব্য রক্ষার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন সরকারের এই নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে সহায়ক হয়েছে। এ ছাড়া নদীগুলোতে নাব্য ফিরে আসায় নৌপথের উন্নয়ন, যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন ব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়েছে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।