তেলেসমাতি কারবার সাদা কাগজে সই : স্বাস্থ্য সহকারীদের হুমকি, বের হচ্ছে দুর্নীতির ফিরিস্তি

যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ঢাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীদের নিজ দপ্তরে ডেকে এনে সাদা কাগজে সই নিচ্ছেন। কেউ যেন তার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী না দেয় তার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ। সেই সাথে বের হতে শুরু করেছে মীর আবু মীর মাউদের আরো দুর্নীতির ফিরিস্তি।

এদিকে, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু দাউদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেলকে। এই কমিটিতে আরো একজন চিকিৎসক ও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে।

তার অনিয়ম-দুর্নীতির সহায়তকারী হিসেবে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশন সদর উপজেলা শাখার সভাপতি নূর ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন ইতিমধ্যে মাঠে নামিছেন। তারা স্বাস্থ্য সহকারীদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মীর আবু মাউদ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে নিজের সম্পাদে পরিণত করেছেন। নিজ দপ্তরে আপন বোন ও বোন জামাইকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি দিয়েছেন। বোন ও বোন জামাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ স্বাস্থ্য কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মচারীরা।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি স্বাস্থ্য সহকারীদের মাঠে নামান। সব স্বাস্থ্য সহকারীদের উপজেলা অফিসে হাজির করে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠান। যাতে করে মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির কোন তদন্ত না হয়।

সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের প্রায় দুই সপ্তহ হতে চললেও তদন্ত কমিটি কোন কার্যক্রম শুরু না করায় স্বাস্থ্য সহকারীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। মীর আবু মাউদ সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলেছে এমনটাও ধারণা কারো করো।

সূত্র জানায়, মীর আবু মাউদ ২০১৯ সালে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম-দূর্নীতি শুরু করেন। তিনি নিজের বোন জলি খাতুন ও তার জামাই জাহিদ হোসেনকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি নিয়োগ দেন। বোন ও বোন জামাই নিজেদের সময়-সুযোগ মত অফিসে আসেন। বেশিরভাগ দিন পাড়া বেড়ানোর মত অফিসে এসে হাজিরা স্বাক্ষর করে চলে যান। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বললে তার বিরুদ্ধে ডা. মীর আবু মাউদ উল্টো হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকেন। ফলে কেউ এখন আর তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন না।

সূত্র জানায়, মীর আবু মাউদের চরিত্রে রয়েছে নানা কুলষিত দাগ রয়েছে। চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করার সময় এক রোগির আত্মীয় সাথে অসাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। সে সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। পরে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রেহাই পান। বাঘারপাড়ায় চাকরি করার সময় এক নার্সের সাথে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হলে হাতেনাতে ধরা পড়েন। এনিয়ে সেময় সেখানে আন্দোলন গড়ে ওঠে। বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. দিলিপ কুমার রায় তাকে বাঘারপাড়া থেকে সিভিল সার্জন অফিসে সংযুক্ত করেন। এখানেই শেষ নয়, যশোর শহরে একটি বেসকারি ক্লিনিকে পার্ট টাইম ডিউটি করার সময়ও এক নার্সের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ক্লিনিক থেকে তাকে চাকরিচুত্য করা হয়।

সূত্র জানায়, পরিবারিকভাবেই মীর আবু মাউদের পরিবার নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। তার বাবা সাইদুর রহমান একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। মাগুরায় চাকরি করা কালীন সময়ে ডাকাতদের কাছে অস্ত্র ভাড়া দিতেন। এমনকি নিজেও ডাকাতিতে অংশ নিতেন। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর তিনি চাকরিচুত্য হন। মামলা করেও তিনি আর চাকরি ফেরত পাননি। এমনকি পেনশনও পাননি।

সূত্র জানায়, মীর আবু মাউদের পরিবার জামায়ত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপির আমলে তার বাবার চাকরি চলে যায়। এ কারণে সাধারণ মানুষ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সহানুভূতি পেতে নিজেরা আওয়ামী লীগ সাজেন। বিষয়টি জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।

সূত্র জানায়, মীর আবু মাউদের আস্থাভাজনরা তাদের নিয়মে আফসি আসলেও তাদের জন্য কোন আইন নেই। যে মীর আবু মাউদের আস্থ্যাভাজন হতে ব্যর্থ হয়েছে তার বেলাই সব আইন-কানুন খাটান। দেন গালিগালাজসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি।

সূত্র জানয়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশন নামে যে সংগঠনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোন অস্তিত্ব নেই। এই সংগঠনের জেলায় কোন কমিটি নেই। দীর্ঘদিন জেলা ও কেন্দ্রীয় কোন কার্যক্রম নেই। ফলে সদর উপজেলা শাখা থাকার কোন প্রশ্ন ওঠে না। এই সংগঠনের সভাপতি নূর ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। তারা কোন স্বাস্থ্য সহকারীকে সংগঠন থেকে কোন উপকার করেছে কিম্বা তার পাশে দাঁড়িয়েছে এমন নজির নেই। ফলে মিঠু ও হেলাল সংগঠনকে ব্যবহার করে অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে।