যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। নিজের দুর্নীতি ঢাকতে তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের পচ্ছন্দ মত লোক দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনও করেছেন।
এদিকে , নব গঠিত তদন্ত কমিটির তিন সদস্যের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদকে রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার কতিপয় নেতা।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও থেমে নেই তার অপকর্ম। একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছে অপকর্ম। স্বাস্থ্য সহকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, বিভিন্ন স্থান থেকে উৎকোচ গ্রহণসহ চলছেই।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের টাকা আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। যার প্রধান করা হয় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেলকে। তার সাথে আরো দুইজনকে সদস্য করা হয়। তারা হলেন, ডা রেহনেওয়াজ ও সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামানকে। কিন্তু যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ গঠিত তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। এতে করে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস নতুন করে আরো তিনজন সদস্যকে তদন্ত কমিটিতে অন্তভূক্ত করেছেন। নতুন অন্তভুক্ত তিন সদস্য হলেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান ও কেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সংগঠন ইউএইচএফপিও ফোরামের সভাপতি যশোর সদরের ডা. মীর আবু মাউদ ও সাধারণ সম্পাদক চৌগাছার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লাকি। ওই কমিটির অপর নেতা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান ও ডা. আলমগীর। এরা সকলেই ডা. মীর আবু মাউদের নিজস্ব লোক। ফলে ডা. মীর আবু মাউদ তার নিজস্ব লোকজন তদন্ত কমিটিতে থাকার কারণে সুষ্ঠু তদন্ত বিঘœ হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। এখানে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
সূত্র মতে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা একই পদ মর্যাদার লোক এবং তারা সবাই একই সংগঠন করে। যে কারণে কেউ কারো বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করলেও তা সহানুভূতির সাথে দেখবে এটাই নিয়ম। ফলে এই কমিটির তদন্ত বিঘœ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেমে নেই তার অপরাধ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেশ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত করতে দেওয়া হয় ডা. মীর আবু মাউদের বিরুদ্ধে। মীর আবু মাউদ সব কিছু ম্যানেজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক পক্ষর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে। কিন্তু কোন কিছু না করে উল্টো আরো টাকা দাবি করে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি যশোর সদর উপজেলার একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোপাটার (সিএইচসিপি) তার চাকরির বেতনের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার জন্য মীর আবু মাউদের দারস্ত হন। এজন্য ডা. মীর আবু মাউদ তার কাছে উৎকোচ দাবি করেন। দাবি কৃত টাকা দিতে না পারলে তার সাথে একান্ত সময় কাটানোর প্রস্তাবও দেন। আর এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, নতুন যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার থেকে নিন্ম পর্যায়ের লোক দিয়ে তদন্ত করা যাবে না। তার সম পদমর্যাদার কিম্বা উচ্চ পদ মর্যাদার লোক দিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে।
এই কমিটির সদস্যরা ডা. মীর আবু মাউদের নিজস্ব লোক এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।