ঝিনাইদহে মন্ডপে মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজার প্রস্তুতি, তুলির আঁচড়ে প্রস্তত হচ্ছে প্রতিমা

আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের আনাগোনা শরতের ফুল শিউলি আর শরতে ফোটা কাঁশফুল। সঙ্গে সাদা মেঘের গর্জনে নৌকায় গমন করে ছুটে আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।আর ক’দিন বাদেই নৌকায় গমন করে ছুটে আসছেন দেবী দূর্গা।দেবীর গজে আগমন ফল শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর তা-ই প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা।হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজার প্রস্তুতি এখন শেষের দিকে। তুলির আঁচড়ে প্রস্তত হচ্ছে প্রতিমা। মন্দিরে মন্দিরে চলছে উৎসবের আমেজ। ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় এবছর ৪’শ ৪৫ টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ততা কমিয়ে এনছেন কারিগররা ও শিল্পীরা।
শ্রী অরবিন্দু পাল নামের এক কারিগর বলেন, গত বছর করোনার কারণে আমাদের কাজ কম ছিল। আয়ও গত বছর কম হয়েছে। করোনার কারণে প্রতিমার কম তৈরী করেছিলাম। কিন্তু এ বছর প্রতিমা বেশী বানাচ্ছি। এতে আমরা খুশি।
আকাশ দাশ নামের এক শিল্পী বলেন, আমাগের খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। সকাল ৬ ডা থেকে শুরু করে রাত ২ ডা পর্যন্ত কাজ করতি হচ্চে। তুবও ভালো কিছু টাকা তো হবিনি।তাই আনন্দের সাথে কাজ করতি হচ্চে।
সুজন পাল নামের এক শিল্পী বলেন, এবার আমরা তো প্রথম দিকে অনিশ্চতায় ছিলাম। কাজ কয়টা হবে তা ঠিক হয়নি। করোনা প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ার ফলে কাজ বেড়ে গেছে। তাই রাত-দিন বান্ধে কাজ করতি হচ্চে। কিন্তু এবার প্রতিমা তৈরীর সব মালামালের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। খরচ এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।আগামী ১ অক্টোবর থেকে ৫ দিনব্যাপী শুরু হবে শারদীয় দুর্গাৎসব।ঝিনাইদহ পবহাটি বাবুপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির কমিটি সভাপতি মনোজ মজুমদার ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পাশাপাশি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পবহাটি বাবুপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মজুমদার জানান, এ বছর ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকায় ২০টি মন্ডপসহ সদর উপজেলায় মোট ১’শ ৫ টি, শৈলকুপায় ১’শ ২৭ টি, কালীগঞ্জ ৮৭ টি, কোটচাঁদপুরে ৪৬ টি, মহেশপুরে ৪৭ টি ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ৩৩ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।অপরদিকে ১ নং ওয়ার্ডের পবহাটি বাবুপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ পার্থ কুমার বসু জানান, এবছর আমাদের মন্দিরে মোট ব্যায় হয়েছে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রায়।এছাড়াও আমরা দুর্গাপূজার মহাষ্টমীতে বিগত বছরগুলিতে যেসব আয়োজন করে থাকি এইবারও ঠিক একই রকম জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে কয়েক হাজার মানুষের জন্যে প্রসাদের ব্যবস্থা করা হবে। এর মধ্যে থাকবে লুচি, ডাল, সবজি, মিষ্টি, বন্দে যা মহাষ্টমীর দিন খাওয়ানো হবে সকাল ১০ টা থেকে রাত ১২ টা অব্দি।ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করবে। ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, পূজা মন্ডপ গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অন্যান্য বছরের মত পূজা মন্ডপ গুলোতে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও রয়েছে পুলিশের নিয়মিত টহল টিম । জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উত্তম গাঙ্গুলি বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি পুজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকেও প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন।