দেবর-ভাবির মিলমিশ

নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির বিরোধ নিষ্পত্তির পথে এগুচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। মঙ্গলবার রজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে তাঁদের বৈঠক হয়।

এর ঘণ্টা দুই পর জানা যায়, জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে পালনে জিএম কাদেরের ওপর বিচারচিক আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। দলীয় দায়িত্ব পালনে আর বাধা নেই।

জাপা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে গত রোববার দেশে ফিরে ওয়েস্টিনে থাকছেন রওশন এরশাদ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে পৌঁছান জিএম কাদের। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানান রওশনপুত্র রংপুর-৩ এমপির রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। চাচা-ভাতিজা প্রায় ১৫ মিনিট একান্তে কথা বলেন। এরপর তাঁরা রওশনের কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় জিএম কাদেরের সঙ্গে ছিলেন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম।

জাপা চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতার বৈঠকের খবরের তথ্য সমকালকে জানান সৈয়দ আবু হোসেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক আলাপ হয়নি। পরস্পর কুশল বিনিময় করেছেন জিএম কাদের এবং রওশন এরশাদ। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপা মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন করায় ভাবি রওশন এরশাদকে ধন্যবাদ জানান জিএম কাদের।

তবে এই বৈঠকের বিষয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের সঙ্গে কথা সম্ভব হয়নি। শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, দেবর-ভাবি এক সঙ্গে নাস্তা করেন। তাঁর দাবি, ‘মা সন্তানকে যেমন ভালবাসে, তেমন মমতায় জিএম কাদেরকে নাস্তা করিয়েছেন রওশন এরশাদ।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এরশাদ পরিবার জাপার ‘মালিক’। রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের দুজনেই জাপার নেতা। কিছু লোকজন তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরির অপচেষ্টা করে। এই অপচেষ্টা আবারও ব্যর্থ হয়েছে। রওশন এরশাদ জিএম কাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, দল ও পরিবারকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তাঁর পক্ষে যা যা করা সম্ভব- তা করবেন।’ এদিকে আবু হোসেন বাবলা ও শফিকুল ইসলাম দুজনেই জানিয়েছেন, রওশন এরশাদ ডাকেননি, নিজে থেকেই অসুস্থ ভাবির সঙ্গে দেখা করতে যান জিএম কাদের।

জানা যায়, দেবর-ভাবির বৈঠকে সাদ এরশাদের স্ত্রী মাহিমা এরশাদও উপস্থিত ছিলেন। রওশনের পক্ষ নিয়ে জাপা থেকে বহিষ্কার হওয়া এবং জিএম কাদের জামানায় দল থেকে বাদ পড়ে রওশন শিবিরে যোগ দেওয়া কোনো নেতা বৈঠকে ছিলেন না।

জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই বিরোধ চলছে রওশন ও জিএম কাদেরের। এরশাদের মৃত্যুর পর বিরোধীদলীয় নেতার পদ দিয়ে তা প্রকাশ্যে আসছে। পরে দুই পক্ষের সমঝোতায় জাপার চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরকে মেনে নেন রওশন। রওশনকেও বিরোধীদলীয় নেতার পদে মেনে জিএম কাদের। তিন বছর ধরে চলে আসা এই স্তিতিবস্থা গত আগস্টে ভাঙে। জিএম কাদের বিএনপির সুরে সরকারের সমালোচনা করছেন- এমন কারণ দেখিয়ে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে জাপার কাউন্সিল ডাকেন রওশন। এর প্রতিক্রিয়ায় রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে তৎপর হন জিএম কাদের।

জাপার ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে স্পিকারকে ১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেন জিএম কাদের। তবে তিন মাসেও স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি। উল্টো রওশনপন্থিদের মামলায় দলীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গত মাস রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হয় জিএম কাদেরকে।

অপরদিকে দেশে ফিরে ফিরে রওশন জানিয়েছিলেন, দলে ঐক্য চান। জিএম কাদেরের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন। শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, ‘রওশন এরশাদ বিমানবন্দরের বক্তব্যেই তো স্পষ্ট কোনো বিরোধ নেই।’

রওশন দেশে ফেরার আগে তাঁর অনুসারীদের ঘোষণা ছিল, রংপুরে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী দেবেন রওশন। কিন্তু সোমবার রাতে জাপার প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে ডেকে সমর্থন জানান রওশন এরশাদ। জাপা সূত্রের ভাষ্য, দেবর-ভাবির ‘ঐক্যমতের’ প্রার্থী ছিল বিরোধ অবসানের প্রথম ধাপ।