‘একক হজযাত্রী’ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

haji

বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের নাগরিকদের জন্য শিগগিরই ‘একক হজযাত্রী’ সেবা চালু করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। অন্য দেশগুলো হলো-তিউনিসিয়া, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও কুয়েত। এর আওতায় হজ ও ওমরাহ পালন এবং রওজা (সা.) শরিফ জিয়ারতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এমনটি জানিয়েছে। সৌদি গেজেট, সিয়াসত ডেইলি, আরব নিউজ ও গালফ নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য মিলেছে।

এদিকে চলতি বছর হজ পালনে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘হজ চুক্তি’ হবে সোমবার (৯ জানুয়ারি)। এতে বহাল হতে পারে আগের কোটা। তেমনটি হলে এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজারের বেশি মুসল্লি হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যেতে পারবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

‘একক হজযাত্রী’ সেবার আওতায় হজ ও ওমরাহ পালন এবং রওজা (সা.) শরীফ জিয়ারতের জন্য ঘরে বসেই অনলাইনে সহজে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে (ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে) নিবন্ধন করা যাবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মিলবে তাৎক্ষণিক ভিসাও। এজন্য স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে ‘নুসুক’ (Nusuk) অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাপ (Saudi Visa Bio) ব্যবহার করেও এ সেবা নেওয়া যাবে।

এ ছাড়া ‘একক হজযাত্রী’ সেবার আওতায় হজ ও ওমরাহযাত্রীদের তুলনামূলক উন্নত বিমা সুবিধা দেওয়ার কথাও ভাবছে সৌদি আরব। অবশ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে সবার জন্যই এ সুবিধা চালু হতে পারে। এ বিমার আওতায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা মিলবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে, কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে, ফ্লাইট দেরি বা বাতিল হলে, এমনকি মৃত্যু হলেও কোনো ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি এর আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। ‘নুসুক’ অ্যাপে ১২১ ধরনের সেবা নেওয়া যাবে।

দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এবার ৭০ লাখ মুসল্লি হজের অনুমতি পেতে পারে। মাহরাম ছাড়াই নারীর হজ পালনের সুবিধা এবারও থাকছে। ফলে হজ ফিরবে আগের চেহারায়। হজের নিবন্ধনে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটও (https://haj.gov.sa) ব্যবহার করা যাবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ৯ জানুয়ারি রিয়াদে এবারের হজ চুক্তি হবে। প্রতিনিধি দলের ১৫ জানুয়ারি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিনিধি দলে মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম থাকবেন। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হজ কাউন্সিলর, কনসাল জেনারেল প্রতিনিধি দলে যুক্ত হবেন। হজ চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে ফরিদুল হক খান এবং সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী ড. তৌফিক আল-রাবিয়াহ সই করবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি হজ ও ওমরাহ সম্মেলন এবং প্রদর্শনীতেও অংশ নেবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারি-পরবর্তী স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে এবার সৌদি সরকার বাংলাদেশকে আগের কোটা অনুযায়ী এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীকে হজ পালনের অনুমতি দিতে পারে। তেমনটি হলে অন্তত ১৫ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করতে পারবেন। সে অনুযায়ী খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের হজ পালনের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার চাইবে বাংলাদেশ।

এবার রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় শতভাগ হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও লাগেজ তল্লাশির কাজ ঢাকায় হবে। এজন্য আগে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি হয়। সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ বাংলাদেশ সফরে এলে গত বছরের ১৩ নভেম্বর এ চুক্তি হয়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার মুসল্লি পবিত্র হজ পালন করেন। ২০২০ সালের জন্য বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে হজ সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়, সেখানে বাংলাদেশিদের হজযাত্রীর কোটা ১০ হাজার বৃদ্ধি করা হয়। ওই বছর (২০২০) এক লাখ ৩৭ হাজার বাংলাদেশি হজে যেতে পারতেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ পালন করতে পারেনি। ২০২১ সালেও বিদেশিদের জন্য হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। মহামারি কমে এলে গত বছর (২০২২) বিভিন্ন দেশ থেকে কোটার অর্ধেক করে হজ পালনের অনুমতি দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার ব্যক্তি হজ পালন করেন। মহামারির কারণে গেল বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ব্যক্তির হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল।