মাইকেল মধুসুধন এ মসজিদেই ফারসি ভাষার শিক্ষা নিয়েছিলেন

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।। প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শস্য সম্ভারে সমৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়ির পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিণত হয়ে উঠেন যুবক।
বাংলা সাহিত্যের অমর একটি নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলা কাব্য সাহিত্যে আধুনিতকার সূচনায় সবচেয়ে বড় অবদান তার। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্ম মধুসূদন দত্তের। বাবা রাজনারায়ণ বসু ও মা জাহ্নবী দেবী ঘরে।

শৈশবে মায়ের কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় মধুসূদন দত্তের। এরপর সাগরদাড়ি এই শেখপুরা জামে মসজিদে এক ইমামের কাছ থেকে শেখেন বাংলা, আরবি, ফারসি ভাষা।

শেখপুর জামে মসজিদ যশোর জেলায় অবস্থিত প্রাচীন মসজিদ ও বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। মসজিদটি কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের শেখপুরা নামক গ্রামে অবস্থিত।

মুঘল শাসনামলে যশোর অঞ্চলের অনেক স্থানেই মুঘল শাসকগণ বিভিন্ন স্থাপনা ও মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। শেখপুরা শাহী মসজিদটি মুঘল আমলেই নির্মিত বলে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ নিশ্চিত করেছেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে স্থাপনা তৈরি বলে মনে করা হয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শেখপুরার এ মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভূক্ত করে। কথিত আছে, মাইকেল মধুসুধন দত্ত এ মসজিদেই ফারসি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছিলেন। সাগরদাঁড়ি থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত পায়ে হেঁটে এই মসজিদটিতে ফারসি ভাষা শিখতে আসতেন।

শেখপুরা মসজিদটি ৩ গম্বুজ বিশিষ্ঠ যা মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের পূর্ব পাশে ৪টি স্তম্ভের ভিত্তির উপর দাঁড় করানো একটি বারান্দা ছিল যার কিছুটা ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। মূল বারান্দা থেকে পূর্ব দিকে একটি ১ মিটার উঁচু দেয়াল রয়েছে। এ দেয়ালঘেরা চত্বরের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে দুটি প্রবেশপথ রয়েছে।

মসজিদটির আয়তন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মিলিয়ে যথাক্রমে ২১.৫ মিটার ও ১৬.৬ মিটার এবং এটি ১২ মিটার উঁচু।

১৩ বছর বয়সে সাগরদাঁড়ি থেকে কলকাতায় চলে যান মধুসূদন। এছাড়াও সেখানে একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর ভর্তি হন হিন্দু কলেজে (প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়)। এখানে পড়ার সময়ই মধুসূদনের কবি হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল ।