যশোরে ফেনসিডিলের চালানসহ যুবক গ্রেফতার

এক বোতল ফেনসিডিল দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ২ হাজার টাকা,যশোর শহরে পৌছালে তার দাম হয় ৩ হাজার টাকা ও রাজধানীতে পৌছালে দাম পড়ে ৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুন লাভের আশায় যশোরে কতিপয় ফেনসিডিল ব্যবসায়ীরা অবাধে বিভিন্ন মাধ্যমে সীমান্ত থেকে ফেনসিডিলের চালান এনে রাজধানীতে সরবরাহ করে মাসে অর্ধকোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে । মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় খ সার্কেলের উপ-পরিদর্শক সৈয়দ নূর মোহাম্মদের হাতে ১শ’ ১ বোতল ফেনসিডিলের চালানসহ আলী রেজা তরফদার (৪১) নামে এক যুবক গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে ফেনসিডিল পাচারের কাহিনী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার ২২ ফেব্রুয়ারী দুপুরে গোপন সূত্রে খবর পান যশোর শহরের ষষ্টিতলা বুনোপাড়াস্থ এক বাড়িতে এক ফেনসিডিল ব্যবসায়ী সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিলের চালান মজুদ করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে প্যাকেট করছে। উক্ত খবরের ভিত্তিতে দুপুর দুই টারপর শহরের ষষ্টিতলা বুনোপাড়াস্থ হোল্ডিং নং ৫১ এর আবু জাফর তরফদারের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় উক্ত বাড়ির আবু জাফর তরফদারের ছেলে আলী রেজা তরফদার যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল থেকে ফেনসিডিল চালান এনে তা মজুদ করে ঢাকায় পাঠানোর জন্য প্যাকেট করছে। প্যাকেট করার অবস্থায় আলী রেজা তরফদারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার পর তার দখল হতে ১শ’ ১ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। ফেনসিডিল উদ্ধারের পর গ্রেফতার হওয়া আলী রেজা তরফদারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের সে জানায়, যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল এলাকা থেকে ফেনসিডিল বোতল প্রতি ২ হাজার টাকায় কিনে যশোর শহরে পৌছানোর পর তার দাম হয় ৩ হাজার টাকা।

যা দেশের রাজধানীতে পৌছালে বোতল প্রতি দাম পড়ে ৪ হাজার টাকা। আলী রেজা গ্রেফতার হওয়ার পর সে মাদকদ্রব্য কর্মকর্তাদের কাছে অকপটে স্বীকার করেন ফেনসিডিলের চালান সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে বোতল প্রতি ১২শ’ টাকা দরে কিনেছে। সূত্রগুলো বলেছে,একজন ফেনসিডিল ব্যবসায়ী প্রতিমাসে সপ্তায় দু’টি চালান সীমান্তবর্তী থেকে রাজধানীতে পাঠানোর পর সাড়ে ১২লাখ টাকা মাসে অর্ধকোটি টাকায় দাঁড়ায়। তাছাড়া,যশোর শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় যে সব ফেনসিডিল ব্যবসায়ীরা ইতিপূর্বে পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ গ্রেপতার হয়েছিল। তাদের মধ্যে সিংহভাগই ছিল নিন্মবিত্ত পরিবারের। বাদ বাকী ২৫% ধনী পরিবারের সদস্য। যারা এখন ফেনসিডিলের চালান সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করে রাজধানীকে পাঠিয়ে সপ্তায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পকেটস্থ করছেন। আর এসব ফেনসিডিল ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের চৌকস কর্মকর্তা ও সদস্যদের সাথে রয়েছে মাসিক সখ্যতা। যার ফলে পুলিশের হাতে আর ফেনসিডিলের বড় চালান আর গ্রেফতার হয়না।

আর যা গ্রেফতার হয় তা ছোটখাটো খুচরা বিক্রেতা। যাদের দখলে পাওয়া যায় ১০ বোতল থেকে ৩০ বোতল পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সূত্রগুলো দাবি করেছেন,যশোর জেলায় পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট রয়েছে। যে ইউনিটে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত ফেনসিডিলের বড় বড় চালান আটকের খবর দিতে পারেন। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে আটক করা হচ্ছে ইয়াবা,গাঁজা,চোলাইমদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। গত বছরে যশোর কোতয়ালি মডেল থানাসহ জেলার ৯ থানায় মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ । যার মধ্যে ফেনসিডিলের মামলা রয়েছে একশ’র অধিক। বাকী মামলা গাঁজা,ইয়াবা,চোলাইমদসহ অন্যান্য মাদক সংক্রান্ত। অপর একটি সূত্র দাবি করেছেন,ফেনসিডিলের বোতল প্রতি দুই হাজার ও তার অধিক দাম হওয়ায় এখন আর ফেনসিডিল সকল মাদক বিক্রেতার কাছে মিলছেনা। যে সব মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অংকের অর্থ রয়েছেন তারা ফেনসিডিল ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ যশোরের পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যশোরের বিভিন্ন পেশার মানুষ।