রাতের ঘটনার পর রোববার (১২ মার্চ) দুপুর থেকে ফের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্ষুব্ধ রাবি শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রশাসনের পদক্ষেপে গাফিলতি ও পুলিশ কর্তৃক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধের অভিযোগ তুলে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন তারা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের একটি পক্ষ ভিসি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
আরেকটি পক্ষ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাবি মূল ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। এতে ওই সড়কে আবারও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহী-ঢাকাসহ দূর পাল্লার যানবাহনগুলো বিহাস মোড় সড়ক ব্যবহার করে শহরে যাতায়াত করছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ও সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকের সামনে পুলিশের জলকামান ও এপিসি কার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত হচ্ছে।
এদিকে সকালে রাবি ক্যাম্পাসে খবর সংগ্রহ করতে গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কর্মরত সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালিয়েছেন। তারা চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যুরো প্রধান আবার শাঈর ও ক্যামেরাপারসন জুয়েলকে মারধর করেন এবং তাদের ক্যামেরা ও বুমসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করেন। হামলায় ক্যামেরাপারসন জুয়েলের মাথা ফেটে যাওয়ায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক সালাহ উদ্দিনের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (১২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তাদের দেওয়া বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে হলে মাইকিং করে সবাই জড়ো হতে বলা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে যোগ দেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন ও সেখানে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় রাত ১২টা পর্যন্ত তারা প্রক্টরকে দেখতে পাননি, যদিও একজন প্রক্টরের অনেক সাহসী হওয়া উচিত।
মেরুদণ্ডহীন কোনো লোককে এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো উচিত না বলে মন্তব্য করে শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা অভিভাবকহীনতায় ভুগছেন। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে, আর প্রক্টরের কোনো খোঁজ নেই। তাহলে প্রক্টরের কাজ কী? এমন দায়িত্বহীন প্রক্টরের অবিলম্বে পদত্যাগ চান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিত অন্তর বলেন, তারা এখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনা সামাল দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শনিবার রাতে শিক্ষার্থীরা রামেক হাসপাতালে থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ দেখতে যায়নি। তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়?
রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, এখনো পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বিনোদপুরসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এ পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করেনি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, তুচ্ছ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় আজ রোববার (১২ মার্চ) ও আগামীকাল সোমবারের (১৩ মার্চ) সকল ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিনোদপুর বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় এই ঘটনার পর থেকে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে রাবি শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পুলিশ ও ব্যবসায়ীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৬ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রাবি শিক্ষার্থী রাকিব আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (১১ মার্চ) বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। বিনোদপুরে নামার সময় বাসভাড়া নিয়ে হেলপারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।