পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য মজুত থাকলে মূল্যবৃদ্ধি কেন, প্রশ্ন ড. মোশাররফের

পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যপণ্য মজুত থাকলে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কেন, সরকারের কাছে তার স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ জবাব চান তিনি।

গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক এক বৈঠক শেষে রমজানের আগে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে— এ মর্মে আশ্বস্ত করে জনসাধারণকে আতঙ্কিত হয়ে বেশি কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, পত্রিকায় এসেছে— জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। রমজান মাসে মানুষ কিভাবে চলবে তা ভেবে দিশাহারা অনেকেই। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, দেশে নাকি নিত্যপণ্যের মজুত প্রচুর আছে। জনগণকে বলা হয়েছে- আতঙ্কিত হয়ে বেশি কেনাকাটা করবেন না।

তিনি প্রশ্ন করেন, যদি এত মজুত থাকে তাহলে কেনাকাটা করলে অসুবিধা কোথায়? আসলে কেনাকাটাই তো করতে পারছে না। চিনির দাম ১২০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ টাকা। গরু ও মুরগির মাংস ভাগ করে কেনাকাটা করার রেওয়াজ এ দেশে ছিল না। ইলিশ মাছ কেটে ২০০-২৫০ গ্রাম করে কেনার রেওয়াজ ছিল না। আজ কিন্তু বাজারে তা দেখা যাচ্ছে। তাতে যদি সরকার বলে সবকিছু মজুত আছে, কী রকম চাপাবাজি করছে সরকার! বাজারে গিয়ে দেখেন মানুষ সরকারকে কী পরিমাণ গালমন্দ করে। আজ গরিব মানুষ কিন্তু অর্ধাহারে আছে। এরপরও এ সরকার চাপাবাজি করছে। আমরা জানতে চাই, খাদ্যপণ্য যদি এতই মজুত থাকে, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কেন, সরকার সুষ্পষ্ট জবাব দিক।

ড. মোশাররফ উল্লেখ করেন, এ দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফীতি। দেখেন মূল্যস্ফীতির অবস্থা। গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়েছে ৮ দশমিক ৭১। এরপর আরও বৃদ্ধি হবে। এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার।

কেন এটা হচ্ছে— এমন প্রশ্ন ছুড়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, কারণ সিন্ডিকেট-মন্ত্রী-নেতা-ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জনগণের টাকা লুট করার জন্যই এ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। সরকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেগা প্রজেক্ট করে লুটপাট করেছে। ব্যাংক লুট করছে। যাদের ঋণ দিয়েছে তাদের কোনো পরিচয় নেই। তাদের লোক বলে ঋণ দিয়েছে। এ লুটপাটের কারণে অর্থনীতি এখন ধ্বংস।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের দামও প্রতি মাসে বাড়ানো হচ্ছে। কিসের জন্য? ইনডেমনিটি দিয়ে সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরের লুটেরাদের রক্ষা করেছে। সরকারের লোকদের টাকা পাচার ও দুর্নীতিকে ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ড. মোশাররফ অভিযোগ করেন, সরকার চাপাবাজি করে, গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। কিন্তু এভাবে কোনো সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। জনগণ বুঝতে পেরেছে, এ সরকারকে সরানো ছাড়া দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করা সম্ভব নয়।

জিয়া পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মৃত্যুকূপে ধাবমান বাংলাদেশ’ নামে দুই গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জিয়া পরিষদের আব্দুল্লাহিল মাসুদ, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, ড. আবু জাফর প্রমুখ।