যশোরে ১০০ শিক্ষককে বিদায়ী সংবর্ধনা

২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক উম্মে সালমা সুলতানা।
১৮ মার্চ তিনি রাজধানী থেকে ঝিকরগাছার বাড়িতে এসেছেন। কারণ ১৮ মার্চ সকালে স্থানীয় শিক্ষক সমিতি তাদের বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছে।

শিক্ষক উম্মে সালমা সুলতানা বলেন, অবসর গ্রহণের ৫ বছর পর আজ আমাদের অনেকেরই বিদায় সংবর্ধনা। একইসাথে নতুন শিক্ষকদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। কলিগদের অনেকের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে- শুধুমাত্র এই কারণেই তড়িঘড়ি করে ঝিকরগাছায় আসা। অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই ভালই লাগছে। এবার পবিত্র হজ্জে যাবো; সকলের সাথে দেখা হওয়ায় আনন্দ লাগছে।

কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রুহুল আমিন অবসর গ্রহণ করেন ২০১১ সালে। ১৯৭৪ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশায় আসেন। ১৯৭২ সালে এসএসসি পাশ করে প্রথমে চৌগাছার গরিবপুর স্কুলে যোগ দেন। এরপর শিয়ালঘোণা এবং শেষে কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কেউই শিক্ষকতা পেশায় আসেননি। তবে, মেয়েজামাই একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অবসর গ্রহণের এক যুগ পরে বিদায় সংবর্ধনা হওয়াতেও ভাল লাগছে। অন্তত যেসব শিক্ষক সহকর্মী ছিলেন, তাদের সঙ্গে দেখা হলো, আলাপ হলো- এটিই বা কম কীসে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাশাপাশি একই অনুষ্ঠানে নবাগত শিক্ষকদের সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঝিকরগাছা উপজেলা শাখা।

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের উন্মুক্ত মঞ্চে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা ও নবাগত শিক্ষকদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

এই সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাহিদ হাসান শামীম।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত নবাগত সহকারী শিক্ষক লাবণ্য আকতার বলেন, আজ একদিকে যেমন বিদায়ের বেদনা, তেমনই নতুনদের আহ্বানও। দুই জেনারেশনের শিক্ষকদের যেন এক মহামিলন ঘটেছে। এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে বেশ ধন্য মনে হচ্ছে, খুশি লাগছে – এ এক অন্যরকম অনুভূতি।

লাবণ্য আকতার চলতি বছরের জানুয়ারিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ঝিকরগাছার মহম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। যশোর সরকারি এমএম কলজ থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তার চাচা, বড়ভাই, বোনসহ আটজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে জানান। মহান এই পেশায় আসতে পেরে খুশি তিনি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমেদ বলেন, ২০১১ সালে আমরা সর্বশেষ শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা ও নবাগতদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। দীর্ঘ ১২ বছর পর আবারও এই আয়োজন করতে পেরে ভাল লাগছে। এ্ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষকদের একটা মিলনমেলা হয়। এবার ১০০ জন শিক্ষককে বিদায় সংবর্ধনা, যার মধ্যে ৪১জন প্রধানশিক্ষক এবং ৫৯ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া নবাগত ৪৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।

সংবর্ধিত শিক্ষকদের প্রত্যেককে (বিদায়ী) একটি করে সম্মাননা স্মারক, নগদ চার হাজার করে এবং দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানঅতিথি হিসেবে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মে.জে. (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। তিনি শিক্ষকতার মতো মহান এই পেশার সাথে সম্পৃক্তদের সকলের মঙ্গল কামনা করে বলেন, আপনারাই মানুষ গড়ার কারিগর। জাতি গঠনে আপনাদের ভূমিকা অপরিসীম।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম, ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌসী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।