চৌগাছায় আশ্রয়ন প্রকল্পের নামজারিতে ঘুষ দাবী

যশোরের চৌগাছায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও ঘর পাওয়া ব্যক্তিদের কাছে নাম জারির জন্য ঘুষ দাবী করেছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) জাহাঙ্গীর হোসেন। এ প্রকল্পের জমি ও ঘর পাওয়া চৌগাছা পৌরসভার ভূমিহীন সম্রাট মোল্লা এই ঘুষের বিরুদ্ধে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাসের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। পরে তাঁর পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে সম্রাট বলেছেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও একটি ঘর পেয়েছি। গত ২০ মার্চ উপজেলা পরিষদে জমির দলিলে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য আসলে নায়েব জাহাঙ্গীর আমাকে মোবাইলে কল করে (তার ব্যবহৃত ০১৭১২৯২২১০৯ নম্বরে) দ্রুত ২২০০ টাকা বিকাশ করে দিতে বলেন। এরপর আবারও ফোন করে টাকা দিয়েছি কিনা জানতে চান। তিনি বারবার আমার কাছে ফোন করে টাকা চাচ্ছেন, বলছেন জমির নাম পত্তনের জন্য টাকা লাগবে। অথচ এসিল্যান্ড স্যার আমাকে বলেছেন এ বিষয়ে কোন টাকা লাগবে না। আমি সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।’ সম্রাটের স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, নায়েব বারবার ফোন করে টাকা চাচ্ছে। কোন কথা শুনতে চাচ্ছে না। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

জমি ও ঘর পাওয়া অন্য উপকারভোগী ফুলসারা ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের খাদিজা খাতুনের স্বামীও নায়েব জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২২শ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছেন। বুধবার (২২ মার্চ) জমি ও ঘরের সার্টিফিকেট নিতে আসার সময় সকালেও নায়েব জাহাঙ্গীর খাদিজার স্বামীর মোবাইলে কল করে টাকা জোগাড় হয়েছে কিনা জানতে চান। খাদিজা বলেন, টাকা চাওয়ার পর আমরা আমাদের ইউনিয়নের নায়েবের কাছে যেয়ে বিষয়টি বলি। তিনি আমাদের বলেন, এই জমি ও ঘর পেতে কোন টাকা দিতে হবে না।’ পরে আমরা নায়েবকে (জাহাঙ্গীর) বলেছি আমাদের কাছে টাকা নেই। আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ ভাই (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী) টাকা দেবে।’

একইভাবে নায়েব জাহাঙ্গীর মোবাইলে ফোন করে পৌরসভার ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ঠান্ডু সর্দারের কাছে ২৫শ টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ঠান্ডু জানান, ফোন করে নায়েব সাহেব বলেন, ‘আমার নম্বরে বিকাশ করে ২৫শ টাকা পাঠিয়ে দে।’ ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর আরেক বাসিন্দা শান্ত সর্দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য জমি ও ঘর দিয়েছেন। আমি আগে জমি ও ঘর পেয়েছি। কোন টাকা দিতে হয়নি। তাহলে এখন কেন নায়েবকে জমি দিতে হবে? একই অভিযোগ করেছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাশিলা ও খড়িঞ্চা গ্রামে আশ্রয়ণের জমি ও ঘর পাওয়া আরও কয়েকজন।

এবিষয়ে নায়েব জাহাঙ্গীর হোসেন মোবাইলে বলেন, আমি এখন ঢাকা বারডেমে আছি। আর এসব ভূ’য়া কথা। শুধু শুধু রং মাখামাখি হচ্ছে। এক পর্যায়ে তিনি এসি ল্যান্ডের সাথে দেখা করে এই প্রতিবেদকের সাথে ফিজিক্যালি দেখা করবেন বলে জানান।

চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। বিষয়টি ইউএনও এবং এডিসি (রাজস্ব) স্যারকে জানিয়েছি। স্যারদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণের জমি ও ঘর পেতে কাউকে এক টাকাও দিতে হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।