সবুজ-সোনালী আভায় দুলছে অভয়নগরের বোরো খেত,বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

যশোরের অভয়নগরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী-সবুজের আভায় বোরো ধান। মৃদু বাতাসের দোলায় কৃষকের ক্লান্তিকে মিলিয়ে দিতে খেতগুলো যেন সদা তৎপর। বোরোর খেতগুলো দেখলে “ধনে ধানে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা” কথাটির স্বার্থকতা খুজে পাওয়া যায়। হাড়ভাঙ্গা কঠোর পরিশ্রমের ফলে রোপিত ধান গাছের বুক চিরে বেরিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। খুবই ভালো বের হচ্ছে সোনালী আভার ধানের বাইল।

লক্ষ্য অর্জনের দিন গুনছেন এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক।
অভয়নগর উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা(নওয়াপাড়া)র বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল হাইব্রিড এবং উফসী মিলে মোট ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। গতবছর আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। গতবারের তুলনায় এবার বেশি আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে।
সেই হিসাবে এবছর ধান উৎপাদন হবার স¤ভাবনা রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ০১ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন। গতবার ধান উৎপাদন হয়েছিল ৮৯ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গতবছরের তুলনায় এবার ১১ হাজার ৯১৯ মেট্রিক টন বেশি ধান উৎপাদন হবার সম্ভাবনা রয়েছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৯ কোটি ৭৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা।
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে বোরো চাষ হয়েছে ১হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে, সুন্দলী ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে, চলিশিয়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে, পায়রা ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে, শ্রীধরপুর ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে, বাঘুটিয়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে, শুভরাড়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৩৯ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। নওয়াপাড়া পৌরসভায় বোরো আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সত্যিসত্যিই ধান গাছের বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে কৃষকের স্বপ্ন, নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকারা এলাকার কৃষক আমির আলী ও হোসেন আলী জানান, ‘আমরা চারা লাগানোর পর থেকে নিয়মিত পরিচর্যা করছি। নিয়মিত দেখাশোনা না করলে আগাছা ও পোকায় ধরে ফেলে। আমরা পোকা-মাকড় দমনের জন্য আলোর ফাঁদ, আইপিএম ও ইঁদুর নিধনের জন্য ফাঁদসহ ব্যবহার করছি আধুনিক পদ্ধতি। ঝড় , রোগবালাই না হলে ভালো ফলন আশা করছি।

ইছামতি বিলে বোরো চাষ করা কৃষক আ: ছালাম আ: কালাম এবং কোদলা বিলে বোরো চাষ করা বিল্লাল হোসেন জানান, বোরো ধান গাছে কারেন্ট পোকা, খোল পোড়া, ব্লাস্ট রোগ, ধানের বাদামি গাছ ফড়িংসহ সকল প্রকার পোকামাকড় ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সকল রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিতে আমাদের কাছে আসছেন উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা। ফলে ধানের উৎপাদন ভালো হবে আশা করছি।
জানতে চাইলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, ভবদহ জলাবদ্ধ যেসব বিলে এবার বোরো চাষ হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বিল কেদারিয়া, বিল বোকর, বিল ঝিকরা, কাছোরাবাদ বিল, ডুমুর বিল ইত্যাদি। এসব বিলে গত বছর বোরো উৎপাদন করা না গেলেও এবছর কৃষকেরা বোরো উৎপাদন করতে পেরেছেন। অভয়নগরে এবার যেসব জাতের ধানের চাষ বেশি হয়েছে তা হলো: হাইব্রিড জাতের মধ্যে- এসএল-৮, এসিআই, হিরা, পারটেক্স, সিনজেসটা- ১২০৩ ইত্যাদি। উফশী জাতের মধ্যে- ব্রি-২৮, ব্রি- ৫৮, ব্রি-৮১, বঙ্গবন্ধু- ১০০ ইত্যাদি।

বোরো চাষ উল্লেখযোগ্য বেশি হবার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ লাভলী খাতুন জানান, সরকারিভাবে পানি নিষ্কাশনের ফলে এবার ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার অনেক বিলের পানি সরে গেছে। সেসব এলাকায় বোরোর চাষ হয়েছে। তাছাড়া সারের দাম স্থিতিশীল থাকা, সময়মত ও পরিমানমত সার-বীজ-কীটনাশকের প্রাপ্যতা, কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা, কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ, আইপিএম পদ্ধতির ব্যবহার, ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে এবার এ উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আমরা আশাবাদী।