যশোর প্রধান ডাক ঘরের পোষ্ট মাস্টার আব্দুল বাকী কর্তৃক ১৭ জন গ্রাহকের ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজারের অধিক টাকা আত্মসাতের ঘটনা আগামী আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হচ্ছে। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তিনি প্রধান ডাক ঘরে পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে যোগদান করে প্রথম মাস থেকে টাকা আত্মসাতের পথ বেছে নেয় বলে বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া, তিনি প্রধান ডাক ঘরে পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে যোগদানের পূর্বে একই অফিসে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মাঠ) ডাক জীবন বীমা যশোরে দায়িত্ব পালন করেছেন। পোষ্ট অফিসের টাকা আত্মসাতকারী ডাক বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে আরো অজানা কাহিনী।
যশোর প্রধান ডাক ঘরে সরেজমিনে যেয়ে জানাগেছে, গত বছর ২০২২ সালের ২ জানুয়ারী আব্দুল বাকী পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি উক্ত বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একই অফিসে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মাঠ) ডাক জীবন বীমা যশোর পদে বিগত ২০১৯ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন কর্মকর্তার তালিকায় তার নাম রয়েছে আলহাজ আব্দুল বাকী। পদোন্নতি নিয়ে পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে যোগদান করে জানুয়ারী মাসের শুরু থেকে তিনি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পর্যায়ক্রমে ১৭ জনের গ্রাহকের ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ৫ হাজারের অধিক টাকা বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আত্মসাত শুরু করেন। পোষ্ট মাষ্টারের দায়িত্ব পালন কালে তার কক্ষের সামনে পিএ’র দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ও ষ্টোনো গ্রাফার আক্কাস আলী দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় গ্রাহকের লেনদেনের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে কর্মরত ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে মোছাঃ মেহেরুন্নেছা ও পরিদর্শক পদে বর্তমানে কর্মরত পবিত্র কুমার বিশ^াস দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল বাকী দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আক্কাসের মাধ্যমে বিভিন্ন লেজার বই পরিদর্শনের নামে তার রুমে নিয়ে গ্রাহকের সঞ্চয় করা লেজার বইতে কলম দিয়ে লিখে টাকা আত্মসাতের পথ বেছে নেয়। তিনি টাকা আত্মসাতের শুরুতে একজন গ্রাহকের সর্বনিন্ম সাড়ে ৪ লাখ ও অপর একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ১৪ লক্ষাধিক টাকাসহ ১৭ জনের গ্রাহকের ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজারের অধিক টাকা আত্মসাত করেন। তার হাফভাব দেখে ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টার মোছাঃ মেহেরুন্নেছা ও পরিদর্শক পবিত্র কুমার বিশ^াসের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তারা লেজারসহ বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারেন কর্মরত প্রধান কর্মকর্তা গ্রাহকের টাকা আত্মসাতে লিপ্ত। বিষয়টি বিভাগীয় ডাক বিভাগের কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা প্রথম পর্যায় মাঠে নামেন।
তারা যশোর প্রধান ডাক ঘরে আসেন। সেই সময় পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল বাকী গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী পর্যন্ত ছুটিতে পরিবার নিয়ে ভারতে ভ্রমনে ছিলেন। এ সময়ে পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বর্তমানে কর্মরত গোলাম রহমান পাটওয়ারীকে দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম রহমান পাটওয়ারী দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব নিকাশের লেজার বই পর্যালোচনা করে দেখেন আব্দুল বাকী পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে যোগদানের প্রথম মাসেই গ্রাহকের সঞ্চয়কৃত টাকা আত্মসাত শুরু করেন। ছুটি শেষে আব্দুল বাকী তার কর্মস্থলে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী যোগদান করেন। যোগদান করার পর ৮ ফেব্রুয়ারী তাকে খুলনা বিভাগীয় অফিসে ষ্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়। স্ট্যান্ড রিলিজ করার পর পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে গোলাম পাটওয়ারীকে ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে যোগদান করে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত গোলাম পাটওয়ারী পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অফিসের গ্রাহকের জন্য লেজার বই পর্যালোচনা করে দেখতে পান লেখায় ঘষা মাঝা ও ওভার রাইটিং করা এভাবে ১৭ জনের গ্রাহকের মোট উল্লেখিত টাকা আত্মসাতের বিষয়টি নজরে আসেন। বিষয়টি ডাক বিভাগের খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তাকে জানানোর পর সেখান থেকে গোলাম পাটওয়ারীকে বাদি হয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর জেলা সমন্বয় দপ্তরে মামলা দিতে বলেন। আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার পর খুলনা বিভাগীয় অফিস থেকে দূর্নীতির দায়ে দুদক আব্দুল বাকীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন। সেই থেকে পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল বাকী কারাগারে অবস্থান করছেন। আব্দুল বাকী চলতি বছরে পরিবার নিয়ে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল বলে সুত্রগুলো জানিয়েছেন।
দূর্নীতি দমন কমিশন টাকা আত্মসাতের ঘটনায় প্রধান ডাক ঘরে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আগামীতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে প্রধান ডাক ঘরে কর্মরত পোষ্ট মাষ্টার মোঃ গোলাম রহমান পাটওয়ারী জানিয়েছেন। আব্দুল বাকী কর্তৃক গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের সাথে তৎকালীন পোষ্ট মাষ্টারের পিএ’র দায়িত্ব পালনকারী কম্পিউটার অপারেটর কাম ষ্টোনোগ্রাফার আক্কাস আলী জড়িত থাকতে পারে। ওই সময় আক্কাস আলীকে খুলনা বিভাগীয় অফিসে বদলী করা হয়েছে। কর্মরত পোষ্ট মাষ্টার মোঃ গোলাম রহমান পাটওয়ারী আব্দুল বাকী কর্তৃক গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডাক বিভাগে কর্মরত কয়েকজন জানিয়েছেন, আব্দুল বাকী যশোর শহরের বাসিন্দা তার দূর্নীতি ধরা পড়ায় যারা তার দূর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও ভীতি কাজ করছেন। যশোর জেলা সমন্বয় দূর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেনের কাছে চার্জশীট দাখিলের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হবে।