নানা আয়োজনে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০০তম জন্মদিন পালিত

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ^বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ১০০তম জন্মদিন নড়াইলে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা চত্বরে শিল্পীর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল প্রেসক্লাব, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজ, এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন, লাল বাউল সম্প্রদায়, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মূর্ছনা সংগীত নিকেতন, গ্রেভ শিল্পী গোষ্ঠীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

এদিকে, সুলতানের জন্মবর্ষ নিয়ে এবার বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট সুলতানের জন্মদিন উল্লেখ করে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পক্ষ থেকে ‘জন্মশতবর্ষ’ উপলক্ষে চিঠিপত্র করা হয়েছে। তবে সুলতান ফাউন্ডেশনসহ স্থানীয়দের মতে, ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট এস এম সুলতান জন্মগ্রহণ করেন। প্রতিবছর এ হিসেবে জন্মবার্ষিকী পালন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এবার সুলতানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। এ বিভ্রান্তির ছাপ পড়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলিতেও। পুষ্পস্তবকে কেউ দিয়েছেন ৯৯তম, কেউবা ১০০তম জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ! সুলতানভক্তদের দাবি, একজন বরেণ্য মানুষের একটি নির্দিষ্ট জন্মসাল থাকা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রæত সমাধান করবেন বলে সুলতানভক্তদের প্রত্যাশা।

এছাড়া সুলতানের জন্মদিনে শিশুস্বর্গ মিলনায়তনে শিল্পীর জীবন ও কর্মের উপর শিশুদের অংকিত ১০০ বর্গফুট দৈর্ঘ্যরে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টক্যাম্প, শিশু চিত্রকর্মশালা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও শিশুদের নিয়ে নৌকা ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম খুলনা, যশোর ও নড়াইলের ২০জন বরেণ্য চিত্রশিল্পী আর্টক্যাম্পে অঙশগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে সুলতানের চিত্রকর্মের পর্যালোচনা, আলোচনা সভা ও শিল্পীর জীবনাদর্শের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শন করা হয়েছে।

এসব কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন-সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খান, চিত্রশিল্পী আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম, নড়াইলের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জুলিয়া সুকায়না, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম, নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ অনাদী বৈরাগী, শিশুস্বর্গের প্রধান শিক্ষক চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী, সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু, সাধারণ সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলু, এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ হানিফসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন ও সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার উদ্যোগে দিনব্যাপী এসব কর্মসূচী পিিলত হয়।

চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার ছাড়াও বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন।

শিল্পী সুলতান অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নড়াইলের কুড়িগ্রামে সুলতান কমপ্লেক্স চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।