বাগআঁচড়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিস সেন্টার!

সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় অলি-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য নাম সর্বস্ব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিস সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই মানহীন। বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চাহিদার বিদ্যমান নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। ফলে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসা পাওয়ার বদলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

মানুষের মৌলিক চাহিদারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। সেই মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে শার্শায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে বাগআঁচড়ার মত একটি ছোট্ট বাজারে প্রায় ৮ থেকে ১০ টা ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিস সেন্টার থাকলেও অধিকাংশ মানহীন। নেই নিজস্ব ডাক্তার, নেই পরিশিক্ষিত নার্স, ও দক্ষ টেকনোশিয়ান। এভাবেই উল্টো পথে চলছে বাগআঁচড়ায় স্বাস্থ্যসেবা।

সরকারি নীতিমালা অনুসারে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিস সেন্টারে আধুনিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত নার্স, ও দক্ষ টেকনোশিয়ানসহ সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সে নিয়ম মামা হচ্ছে না এখানে। যা শিকার করেছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা। আবার প্রতিবেদকের ক্যামেরার সামনে অদক্ষদেরই দক্ষ হিসাবে দাড় করানোর চেষ্টাও করেছেন তারা। এ সকল নাম সর্বস্ব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিস সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
দায়িত্বশীলদের নজরদারির অভাবকে দুষছেন তারা।

ভুক্তভোগী এক নারী জানান, তার স্বামী গ্যাসের সমস্যায় অসুস্থ বোধ করলে বাগআঁচড়া জনসেবা ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ভর্তির সয়য় তাকে বলা হয় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হবে। স্বামীর অসুস্থতার কথা চিন্তা করে ওই নারী তখন কোন কিছুই বলেন নি। পরবর্তীতে মাত্র দুইদিন ভর্তির পরে তার হাতে ১৪ হাজার টাকার একটি বিল ভাউচার ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ওই নারীর অনেক কষ্টে ধার দেনা করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করে স্বামীকে বাসায় নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ তার কাছ থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বাগআঁচড়ায় ৩ টি ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঐ সময় ৩ টি ক্লিনিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি পাওয়ার কারণে ৩ টি ক্লিনিকই ছিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাকি ক্লিনিক গুলোতে অচিরেই অভিযান চালিয়ে অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ১০ দফা উপেক্ষা করে পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারণ মানুষের দাবি চিকিৎসা সেবার নামে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিস সেন্টারগুলোর প্রতারণা বন্ধে এখনই কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।

উল্লেখ্যঃ- চলতি বছরের ২৯ শে ফেব্রুয়ারি শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আংশিক অভিযানে বাগআঁচড়া নার্সিংহোম এন্ড ডায়াগনস্টিস সেন্টার, আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিস সেন্টার, ও জনসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিস সেন্টারসহ ৩ টি ক্লিনিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি পাওয়ার কারণে প্রত্যেকটি ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যা মাত্র ১৪ দিন যেতে না যেতে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ যশোর সিভিল সার্ভিস ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস এর দোহাই দিয়ে ওই ক্লিনিক গুলো আবারও খুলে দেয়। আর বাকি ক্লিনিক গুলো অভিযানের আওতা মুক্ত থাকে।