অতি বৃষ্টিতে পানিবন্দী ২৬ গ্রামের ২২’শ পরিবার; ভেসে গেছে শতশত মাছের ঘের

টানা বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলের অভয়নগর উপজেলা অংশের ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৬ গ্রামের ২২’শ পরিবারের আনুমানিক সাড়ে ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। আমন ধানসহ তলিয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর সবজি ও ফসলের ক্ষেত। স্কুলের মাঠ, বসতবাড়ির উঠান পানিতে থই থই। কোথাও কোথাও কোমর এমনকি বুক পর্যন্ত পানি জমেছে। কোথাও কোথাও ঘরের মধ্যেই ঢুকে পড়েছে পানি।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভবদহ জলাবদ্ধতা ও সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়ন এবং নওয়াপাড়া পৌরসভার নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। আনুমানিক ২ হাজার ২২০ টি পরিবারের ঘর বাড়িতে/উঠানে পানি উঠে গেছে। আনুমানিক ৮ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ১৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ জন পুরুষ, ১৮ জন মহিলা এবং ৫৫ জন শিশু আশ্রয় নিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে ১নং প্রেমবাগ ইউনিয়নের জিয়াডাংগা (আংশিক), মাগুরা (আংশিক), বনগ্রাম (আংশিক), বালিয়াডাংগা (আংশিক) এই ০৪ টি গ্রামের আনুমানিক ২০০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২নং সুন্দলী ইউনিয়নের লক্ষীপুর, ডাংগা মশিয়াহাটি, ডহর মশিয়াহাটি, ভাটবিলা, ধোপাদী (আংশিক), সুন্দলী (আংশিক), এই ০৬ টি গ্রামের আনুমানিক ৫০০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩নং চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা, আন্ধা, বেদভিটা, কোটা (আংশিক), বলারাবাদ, চলিশিয়া (আংশিক), বাগদাহ (আংশিক), এই ০৭ টি গ্রামের আনুমানিক ৭০০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪নং পায়রা ইউনিয়নের দিঘলিয়া (আংশিক), বারান্দী (আংশিক), আড়পাড়া (আংশিক) এই ০৩ টি গ্রামের আনুমানিক ২৫০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকারা (আংশিক), সরখোলা (আংশিক) আমডাংগা, লক্ষীপুর (আংশিক), ধোপাদী (আংশিক), গাজীপুর (আংশিক) এই ০৬ টি গ্রামের আনুমানিক ৫৭০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরেজমিনে চার ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে, কোথাও কোথাও বসতবাড়ির উঠানেই কোমর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসতে পারছেন না, গবাদিপশু ও মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করছে। কম দামে বিক্রি হচ্ছে গবাদিপশু।

জলাবদ্ধ কোটা পশ্চিম পাড়া এলাকার পানিবন্দী ইয়াসিন শেখের উঠানে পানি উঠে গেছে, শোবার ঘরের মধ্যেও পানি ঢুকে গেছে। তিনি বলছিলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছেন। রান্না করার জায়গা নেই, কোন চুলা নেই, সকাল থেকে রান্না হয়নি। টয়লেটে যেতে পারছি না, খেতে পারছি না। রাতে খাঁটের নিচে পানি থাকছে, সাপ-পোকার ভয় নিয়ে খাঁটের উপরে আমরা থাকছি। এখনও কোন ধরণের সরকারি সহযোগিতা পায়নি।

অভয়নগর উপজেলা ঘের মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ রবিউল আলম জানান, ঘেরগুলো ভেসে য়েয়ে মালিকরা নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদের পুনর্বাসন দরকার। সরকারি সহায়তা না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে ৪ টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ১১৪.৫০ হেক্টর আয়তনের ৩৩২টি মাছের ঘের এবং ২৪.১৫ হেক্টর আয়তনের ১৮০ টি পুকুর/দীঘি/খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫ কোটি ২৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা সব সময় প্রনোদনা বা সহায়তা দেওয়াার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলে থাকি। এবারও অনুরোধ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ১৫৮১ হেক্টর, সবজির ১৩৬ হেক্টর সহ ১৭৩৮ হেক্টর জমির ফসল ও সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, অভয়নগরের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে যশোরের ডিসি মহোদয় সোমবার এসেছিলেন। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা অভয়নগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতই স্টেক হোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় বসে করণীয় ঠিক করবো এবং জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য গৃহীত সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করবো। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছি।

এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্লুইস গেটে ৪টি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একপি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।’