ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের প্রসিদ্ধ গ্রাম শাখারিদহ। গ্রামের সংখ্যাধিক্য হিন্দু সমাজের মানুষের। ধর্মপরায়ন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সেই পুরনো আমল থেকেই চলে আসছে। একে অপরের পরিপূরক বলে বিবেচিত হলেও ইদানিং গ্রামটিতে “শনি” ভর করেছে বলে মনে করেন গ্রামবাসি। গুটিকয়েক মানুষের কারণে অসংখ্য শিক্ষিতের গ্রাম, বিশেষ করে শিক্ষক বা মাস্টারদের গ্রাম বলে বিবেচিত শাখারিদহ এখন রীতিমত ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। চিকিৎসা পেশার সাথে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কারণে গ্রামটি এখন রীতিমত হিংসা আর রেষারেষির গ্রামে পরিণত হয়েছে। ওই ব্যক্তির হাত থেকে গ্রামের নারী-পুরুষ, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা রক্ষা পেতে সম্প্রতি ঝাঁটা আর জুতো-স্যান্ডেল হাতে রাস্তায় নেমেছেন। যেটা অনেকটা নাটক বা সিনেমার গল্পের মতন মনে হলেও নিরেট এটাই সত্যি।
ঝাঁটা ও জুতো-স্যান্ডেল হাতে মিছিলকারি শতাধিক নারী গ্রাম্য চিকিৎসক কার্তিক দেবনাথকে লম্পট আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে মুনাফা লুটতে চাইছেন উল্লেখ করে মিছিলকারি নারীরা বললেন, তার কাছে হিন্দু-মুসলিম কোন নারীই নিরাপদ না।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কার্তিক দেবনাথ সার্বজনীন দুর্গোৎসবের আগে গ্রামে হাঙ্গামা বাধাতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও হরিণাকুন্ডু থানার সদ্য বিদায়ী অফিসার ইনচার্জ গ্রামে বিদ্যমান দুটি দলের নেতাদের নিয়ে সুষ্ঠূভাবে পুজা উৎযাপনের দায়িত্ব দেন। পরে গ্রামবাসী নিজেদের মত নামযজ্ঞ শুরু করলে তিনি বাধা দিতে থাকেন। তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে গ্রামের বেশকিছু যুবক কালিপুজার দিন ও পরের দিন প্রতিপক্ষের বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে।
রেখা পাল নামের এক গৃহবধূ জানান, তার ৪৫ দিন বয়সী শিশুকে রাত ১০ টার দিকে যখন জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন দেয়া চলছিলো, ওই সময় তার বাড়ির উঠোনে ও জানালার পাশে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরন ঘটানো হলে অসুস্থ শিশুটি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা বাড়ির উঠোনের বোমার আলামত পুলিশকে দেখানোর জন্য রেখে দিয়েছেন।
ওই গ্রামের অসীম পাল জানান, তার মেয়ে অসুস্থ জানা সত্বেও তার বাড়িতে কালিপুজোর দিন রাতে ও পরেরদিন বোমা হামলা চালালে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বয়স্ক জগবন্ধু কর্মকার, লক্ষীনারায়ন পাল ও শংকর পালসহ বেশ ক’জন বয়স্ক মানুষও কার্তিক দেবনাথ সম্পর্কে একই অভিযোগ তোলেন।
নমিতা পাল ও অনিতা পাল জানালেন, কার্তিকের লোভাতুর দৃষ্টির কাছে এলাকার বহু নারির সর্বনাশ হলেও তারা এতদিন লজ্জা ও ভয়ে মুখ না খোলার কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা জানালেন, গ্রামের সার্বজনীণ দুর্গামন্দিরে যাতে প্রতিপক্ষের লোকজন ঢুকতে না পারে, সেজন্য কার্তিক গ্রিলের সাথে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ লাগিয়ে রেখেছে। বিষয়টি বুঝতে পারায় বহু মানুষের প্রাণহানি এড়ানো গেছে। ওই চিকিৎসক গ্রামের মানুষকে “হরিবাসর” করার জন্য কালিমন্দিরেও ঢুকতে দেন না। গ্রামের সব মন্দিরে অধিপত্য বিস্তারের জন্যই তিনি এসব করে থাকেন বলে জানান স্থানীয়রা।
গ্রামবাসির মতে, শুধুমাত্র প্রতিপক্ষতে ঘায়েল করার জন্য পাঁচ স্কুলশিক্ষকসহ নয়জনের নামে মিথ্যে মামলা দিয়েছেন কার্তিক দেবনাথ। আনন্দ পাল নামের এক ব্যক্তি কার্তিকের লোকদের অভ্যন্তরীণ হামলা ঠেকাতে গিয়ে উল্টো মামলার আসামী হয়ে হাজতবাস করছে বলেও তারা জানালেন। অভিযুক্ত কার্তিক দেবনাথের মতামত জানতে চাইলে তিনি তার কাছে গিয়ে বক্তব্য নিয়ে আসতে পরামর্র্শ দেন। এজন্য তার মতামত পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে হরিণাকুন্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রউফ খানের সাথে আলাপ করলে কার্তিকের বিরুদ্ধে গ্রামের হিন্দু নারিদের ঝাটা ও জুতামিছিল সম্পর্কে তিনি বিষয়টি শুনেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানালেন, বিবদমান উভয়পক্ষই মামলা করেছেন । বিষয়টি তদন্তাধীন মামলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।