১৫ নভেম্বর বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-যশোর নতুন রেলপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখো মানুষের রেলযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। বিদ্যমান ৮ ঘণ্টার রেলযাত্রা নেমে আসবে সাড়ে ৩ ঘণ্টায়। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিসীমার এই ট্রেন যাত্রার অপেক্ষায় মানুষ। রেলওয়ের বড় বাজেটের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার ৩৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর কমলাপুর থেকে যশোরের রূপদিয়া ও সিংগিয়া স্টেশন পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করেছে। এই নতুন রেলপথ দেশের বৃহত্তম দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলাকে সরাসরি সংযুক্ত করবে এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।
পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর সেকশনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করব। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৫ নভেম্বর সকালে যশোর হয়ে কমলাপুর স্টেশনের উদ্দেশে বেনাপোল ছেড়ে যাবে এবং একই দিনে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। তিনি বলেন, নবনির্মিত ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেল ট্র্যাকটি যশোরের রূপদিয়া ও সিংগিয়া স্টেশন হয়ে বিদ্যমান খুলনাগামী রেল ট্র্যাককে সংযুক্ত করেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হলে খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী-ভাঙ্গা হয়ে চলাচল করা আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বন্ধ হবে খুলনা থেকে-চুয়াডাঙ্গা-ঈশ্বরদী, যমুনা সেতু হয়ে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস। ফলে এসব ট্রেন থেকে বঞ্চিত হবে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনার মানুষ। এর আগে গত ২৫ মে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু জনবলের অভাব, ইঞ্জিনের সংকটসহ নানা কারণে তা কতটা সম্ভব, এ বিষয়ে রেলের কর্মকর্তারাই নিশ্চিত নন। পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের ফলে প্রতিদিন ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এই পথে এখন ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। দেড় সপ্তাহ পর যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হলে কিছু যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।
সূত্রমতে, ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বেনাপোল এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ট্রিপ সংখ্যা বাড়তে পারে। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা রুটের নকশিকাঁথা ট্রেনেরও ট্রিপ বাড়াতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনা রুটের দূরত্ব ৪১২.৪০ কিলোমিটার। সময় লাগে ১০ ঘণ্টা। নতুন পথে সময় কমবে সাড়ে ৬ ঘণ্টা। বর্তমানে চলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু-ঈশ্বরদী-পোড়াদহ-দর্শনা রুটে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন ১৯৮.৯০ কিলোমিটার রেলপথের ফলে দূরত্ব কমছে ২১৩.৫০ কিলোমিটার। আবার ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ৩৫৪.৪০ কিলোমিটার বর্তমান দূরত্ব। পদ্মা সেতু দিয়ে ১৭২.৩০ কিলোমিটার নতুন রেলপথের কারণে ১৮২.১০ কিলোমিটার দূরত্ব কমছে। বর্তমানে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা, নতুন রেলপথে ভ্রমণের সময় লাগবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ ঘণ্টা। ভ্রমণ সময় কমে যাবে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। রেলওয়ের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি ঋণ হিসেবে দিয়েছে চীন। গত বছরের অক্টোবরে এই লাইনের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ চালু হয় এবং এই সেকশনে পাঁচটি ট্রেন চলাচল করছে।
নতুন বিতর্ক পদ্মবিলা স্টেশন : ঢাকা-যশোর রুটের নতুন ট্রেন পদ্মবিলা জংশন দিয়ে চলাচলের প্রস্তুতি চলছে। এই স্টেশনটি যশোর শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। যাত্রীরা বলছেন, এই স্টেশন থেকে ঢাকা যাওয়ার ট্রেন ধরতে যাত্রীদের অনেক বিড়ম্বনা হবে।
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের পদ্মবিলা স্টেশনে পৌঁছতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার বেশি। এ কারণে পদ্মবিলা জংশনের পরিবর্তে যশোর জংশন থেকে ঢাকা রুটের ট্রেন চলাচলের দাবিতে আন্দোলন করছে রেলযোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।
সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় হকি দলের ম্যানেজার কাওসার আলী বলেন, আমাদের দাবি, যশোরের ট্রেন যশোর জংশন হয়ে যেতে হবে। এই দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরা রেল অবরোধসহ আরও কর্মসূচি দেব।