যশোরে গণিত জয়ের আনন্দে কাটলো উৎসবের একবেলা

তীব্র শীত উপেক্ষা করে গণিত জয়ের আনন্দে দিনের একবেলা কেটেছে খুদে শিক্ষার্থীদের। শনিবার সকালে যশোর জিলা স্কুল মাঠে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক- প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসবের উদ্বোধন হয়।

উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো.আজাহারুল ইসলাম।উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন,আমি ষষ্ট শ্রেণিতে গণিতে মাত্র সাত নম্বর পেয়েছিলাম। আমার মত গণিতে খারাপ শিক্ষার্থী এখানে আর একজনও নেই। গণিতে আমার ভীষণ ভয় ছিলো। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস আমাকেই সেই গণিত উৎসবের উদ্বোধন করতে হচ্ছে। ৩৫ বছর আগে এই ধরণের উৎসবে আমি যোগ দিতে পারলে হয়তো গণিতে আমার ভয় থাকতো না। সেই হিসেবে তোমারা সৌভাগ্যবান’।

মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ডাচ্ বাংলা ব্যাংক যশোর শাখার ডেপুটি ম্যানেজার জাকিরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রেজা।

এরপর সোয়া এক ঘন্টার পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা শেষে মিলনায়তনে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
এই পর্বে শিক্ষার্থীরা গণিত ও বিজ্ঞানের মজার মজার প্রশ্ন করে শিক্ষকদের যেন ঘাম ঝরিয়ে দেয়।

শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে মঞ্চে ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশলী বিভাগের প্রভাষক জুবায়ের আল মাহমুদ,যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক কওছার আলী ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা সবুজ, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও গণিত অলিম্পিয়াডের (প্রাথমিক) মাস্টার ট্রেইনার তরিকুল ইসলাম, একাডেমিক কাউন্সিলর ফারহান উদ্দীন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমিক কাউন্সিলর প্রত্যয় ঘোষ ও বন্ধুসভার সভাপতি জাহিদুল যাদু।
আবৃত্তি করেন বন্ধুসভার বন্ধু মনিরা খাতুন ও গান পরিবেশন করেন ইসরাত শাহেদ টিপ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্তকে না এবং মা, মাটি ও মাতৃভূমিকে হ্যা বলার শপথ করানো হয়। শপথ করান প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৩০ জন ঢাকার জাতীয় উৎসবে যোগ দেওয়ার টিকিট পেয়েছে। তাদের গলায় মেডেল পরিয়ে দেন অতিথিরা।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেলিম রেজা ও সহকারি প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দীনের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
মাগুরা থেকে নিজের ছেলে-মেয়ে নিয়ে উৎসবে যোগ দিতে আসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুবিনা জেসমিন।
তিনি বলেন, ‘উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্যে ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠে ছেলে ও মেয়েকে প্রস্তুত করে সাতটায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি। নয়টার মধ্যে ভেন্যুতে হাজির হয়েছি। গণিত নিয়ে ছেলে মেয়েদের অনেক আগ্রহ রয়েছে। এজন্যে ম্যাথ ও ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের মত উৎসবে যোগ দিতে হয়’।
নড়াইলের লোহাগড়া থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেলের হাত ধরে উৎসবে যোগ দিতে আসেন কলেজ শিক্ষক মিলন সরকার।
তিনি বলেন, ‘ছেলের ইচ্ছায় আমাকে আসতে হয়েছে। গণিত তার খুব প্রিয়। নিজে নিজেই অনলাইনে নিবন্ধন করে বাছাই পর্বে নির্বাচিত হয়েছে। এই শীতের ভোরে তাকে নিয়ে আসতে হয়েছে আঞ্চলিক গণিত উৎসবে। উৎসবে যোগ দিতে পেরে আমরা খুব খুশি’।