কীটনাশক প্রয়োগে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কৃষকদের

ঝিনাইদহ জেলা ব্যাপী ক্ষেতে পোকামাকড় দমনে বাড়ছে কীটনাশকের প্রয়োগ। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সুরক্ষাবিহীন ফসলে কিটনাশক প্রয়োগ করছে কৃষকরা। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি অধিদফতরের সহযোগিতা পান না তারা। অপরদিকে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের সচেতন করতে নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের উর্বরতা বৃদ্ধি ও পোকামাকড় দমনে পেঁয়াজ ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন জেলার শৈলকুপা উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক জাফিরুল ইসলাম। ফসল সুরক্ষায় এতসব আয়োজন থাকলেও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেই কোন ভ্রু-ক্ষেপ। কীটনাশক প্রয়োগের সময় মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষিত। ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। এতে নিজের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এই কৃষক। তিনি বলছেন, নিয়ম থাকলেও তারা স্বাস্থ্য সচেতন না। যার কারণে কোনরকম ‘সেফটি গ্যাজেটস’ বা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেন।

শুধু জাফিরুল ইসলামই নয়, ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে কৃষকদের এমন উদাসীনতার দেখা মিলছে। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি দফতরের সহযোগিতা পান না তারা। এছাড়াও অনেকেই জানেনই না কীটনাশক প্রয়োগের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কি কি ব্যবহার করতে হয়।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আছে বলে শুনিনি কখনও। মুখ না ঢেকে খালি হাতেই স্প্রে করি। মাঝেমধ্যে মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো ভাব হয়। তখন বেশি পানি দিয়ে গোসল করি। দোকান থেকে মাথাব্যথার ওষুধ খাই।’

কৃষক আফসার আলী বলেন, কৃষি অফিসে প্রশিক্ষণে গেলে কীটনাশক স্প্রে করার নিয়মকানুনের কথা বলা হয়। কিন্তু মাঠে কাজ করার সময় এসব মনে থাকে না। তাছাড়া হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক কেনার টাকাও নেই। কৃষি অফিস পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করলে আমার মতো কৃষকরা নিয়মকানুন মানতে পারত।

কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে কয়েকজন কৃষক বলেন, ফসলে যে কীটনাশক ব্যবহার করি তা ঠিকমতো ধোয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। তবে কৃষি অফিস যদি আমাদের মেশিন কিনে দিত তাহলে আমরা রোগবালাই থেকে রেহাই পেতাম।

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) নীতিমালার পরামর্শ হলো, রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশকের অনুপ্রবেশ রোধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ ছাড়া বাতাসের উল্টোদিকে তা প্রয়োগ করা যাবে না।
এ বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়ার পরও কৃষকরা সচেতন হচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষি বিভাগের।

তবে কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিস শুধু কাগজকলমে পরামর্শ দেওয়ার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আনিসুজ্জামান খান বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ঝিনাইদহের চাষীদের বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সারা বছরই কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কীটনাশক ছিটানোর আগে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। আইপিএম অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি মানছেন না। ভবিষ্যতে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ জানান, কীটনাশক প্রয়োগের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করলে জটিল ও কঠিন রোগ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার না করে কেউ কীটনাশক স্প্রে করলে তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, চর্মরোগ, চোখ ও শরীরে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এমনকি ফুসফুসে বড় ধরনের রোগও হতে পারে। তাই এখনি বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

এছাড়াও কীটনাশক প্রয়োগের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি না মানায় কৃষকরা ক্যান্সার, শ^াসকষ্ট, এ্যাজমাসহ বিভিন্œ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঝিনাইদহ জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমান ১ লাখ ৫০ হাজার ২’শত ৩৫হেক্টর।