নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় জেলা জজ আদালতের আদেশ অমান্য করে একটি বিরোধপূর্ণ জমিতে পাকা দালান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. নুর উদ্দিনের (৫০) বিরুদ্ধে। আদালতের নির্দেশে কবিরহাট থানা পুলিশ সরেজমিন গিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তিনি তা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে ভবনের ছাদের ঢালাই সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ নোয়াখালী সদর অতিরিক্ত ১ম আদালতের সহকারী জজ নিশি আক্তার বিরোধপূর্ণ জমিতে উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার এবং কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ বা জমির প্রকৃতি পরিবর্তন না করার জন্য কবিরহাট থানাকে নির্দেশ দেন।
অভিযুক্ত নুর উদ্দিন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী।
আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগে কবিরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব বড়ুয়া অভিযুক্ত নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালত কর্তৃক স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ লিখিতভাবে জানানোর পরও নুর উদ্দিন নলুয়া মৌজার ৩৮৫ নম্বর খতিয়ানের ২৬০১/৯০ দাগে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। সরেজমিন তদন্তে এর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে, যা পেনাল কোডের ১৮৮ ধারায় অপরাধ বলে প্রতীয়মান হয়।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের ল্যাংড়ার দোকান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি কাঁচা রাস্তার পাশে নিচু জমিতে ইটের তৈরি একটি পাকা দালানের নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন। ভবনটিতে দরজা-জানালা লাগানো হয়েছে এবং পাশে একটি সেফটি ট্যাংক তৈরি করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে ও বাইরে বৈদ্যুতিক কাজ চলছে।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা শুনেছেন জমিটির মালিকানা নিয়ে নুর উদ্দিনের সঙ্গে অন্য এক ব্যক্তির বিরোধ রয়েছে। গত ২২ মার্চ কবিরহাট থানা থেকে পুলিশ এসে কাজ বন্ধ রাখতে বললেও নুর উদ্দিন তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। তারা আরও জানান, গত ৪ এপ্রিল রাতে তারা ভবনের ছাদের ঢালাই দিয়েছেন এবং এরপর থেকে অন্যান্য কাজ করছেন। আদালতের আদেশের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান।
জমির মালিকানা দাবিদার মো. সামছুল হক জানান, তিনি ১৯৯০ এবং ১৯৯৫ সালে দুটি দলিলের মাধ্যমে ২ একর ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ভোগদখল করছেন এবং নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করছেন। তবে ২০১৮ সালে নুর উদ্দিন হঠাৎ করে জমিটি তার বলে দাবি করেন এবং তার জমির ফসল নষ্ট করেন। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করলে নুর উদ্দিন তার মালিকানার স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এরপর থেকেই বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
আদালতের আদেশ অমান্য করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার পাঁচটি রায় ডিক্রি আছে এবং প্রতিপক্ষের কোনো কাগজপত্র নেই। তিনি শুধু খতিয়ানের মালিক বলে দাবি করেন।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে এবং উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য নোটিশ দেয়। তবে, বিবাদী নুর উদ্দিন আদালতের আদেশ অমান্য করে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন। এর সত্যতা পাওয়ায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।