শৈলকুপায় সোলার প্যানেল কুপিয়ে নষ্ট,২ লাখ টাকা জরিমানার শিকার এক কৃষক, দিশেহারা পরিবার

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় রাতের আঁধারে সেচ যন্ত্রের সোলার প্যানেল কুপিয়ে নষ্ট করার ঘটনায় সালিসি বৈঠকে এক হতদরিদ্র কৃষককে ২ লাখ টাকা জরিমানার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সামাজিক মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।

এরই মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় শুক্রবার (১৬ মে) সকালে ভুক্তভোগী ওই কৃষক পরিবারের দুই সদস্যকে শারীরিক নির্যাতন ও হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। ঘটনাটি উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে ঘটেছে। ভুক্তভোগী কৃষক আরিফ মন্ডল ওই গ্রামের আজব মন্ডলের ছেলে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কৃষক আরিফ মন্ডল মাঠে সবজি চাষ করে তা বাজারের বিক্রি করে সংসার চালান। একই গ্রামের নজরুল ইসলাম বকুলের ছেলে কৃষক ওসমান মন্ডল সর্ম্পকে দুজন আপন চাচাতো ভাই। তাদের মধ্যে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে। শুধুমাত্র জমিই নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক দলাদলিতে তারা আলাদাভাবে বিভক্ত। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে কে বা কাহারা গোবিন্দপুর মাঠে অবস্থিত ওসমান গনীর সেচযন্ত্রের সৌর বিদ্যুতের সোলারের ৯টি প্যানেল কুপিয়ে নষ্ট করে। ঘটনাটি নিয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না করেই ওসমান গনীর সন্দেহের ভিত্তিতে স্থানীয় সামাজিক মাতব্বরদের মাধ্যমে একতরফা সালিশ বৈঠক করে কৃষক আরিফ মন্ডলকে দায়ী করে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।

এ ঘটনা জানাজানি ও আইনের আশ্রয় নেওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে আরিফ মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে তার বৃদ্ধ বাবা ও ভাই ফারুক মন্ডলকে ধরে নিয়ে যায় ওসমান গনিসহ ১৫/২০ জন। এসময় ফারুক মন্ডলকে হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয় এবং বৃদ্ধ বাবা আজব মন্ডলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ফারুক মন্ডলকে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে উদ্ধার করে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষক আরিফ মন্ডলের বাবা আজব মন্ডল বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমার ভাইয়ের সঙ্গে অনেক বছর ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। রাতের আঁধারে কে বা কাহারা ভাইয়ের ছেলের সোলার প্যানেল কুপিয়েছে। অথচ এর দায়ভার আমার ছেলের উপর দিয়ে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। আমরা টাকা না দিতে পারলে হাত-পা ভেঙে দিতে চেয়েছে। আমরা এত টাকা কোথায় পাবো।’

কৃষক আরিফ মন্ডল বলেন, ‘দলীয়ভাবে একজোট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই। আমারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

আরিফ মন্ডলের ভাই ফারুক মন্ডল বলেন, ‘আমরা এসবের কিছুই জানিনা। কোনো প্রমাণ ছাড়াই জোর করে আমাদের দোষী করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে ওসমান, হান্নান, মিরাজসহ ১৫/২০ জন আমাদের বাড়িতে এসে ধরে নিয়ে গিয়ে আমাকে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে মারধর করে। আমার ভাই পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অভিযোগকারী ওসমান গনি বলেন, ‘সোলার প্যানেল কুপাতে কাউকে দেখিনি ঠিকই, তবে আগেও আরিফ আমার সোলারের ফিতা কেটেছে, সেটা আমি নিজে দেখেছি। সেই কারণেই আমি তাকে সন্দেহ করছি। সালিশে ওরা না আসায় মাতব্বররা রায় দিয়েছেন, হয় তারা সোলার কিনে দিবে তা না হলে ২ লাখ টাকা দিবে।’

সামাজিক মাতব্বর কায়দা আলী বলেন, ‘ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে বিচার করা হয়েছে। তবে বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।’

ইউপি সদস্য খেলাফত আলী বলেন, ‘এটা সাজানো নাটক। আরিফ একজন নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। জমি নিয়ে পুরোনো বিরোধ থেকে এ চক্রান্ত করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত দাবি করছি’

হাকিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন গ্রামের মাতব্বরদের উপস্থিতিতে সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে বিচার করা হয়েছে। এর আগেও তারা অপরাধ করেছে, যেটা সর্বজন স্বীকৃত।

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, এঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ পায়নি। তবে ‘লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’