যশোরে ভারসাম্যহীন নারীকে বাঁচাতে ছুটে গেলেন পুলিশের তিন সদস্য

মঙ্গলবার (৩ জুন) যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশন। সময় রাত ২টা ৩০ মিনিট। চারপাশ ঝড়-বৃষ্টি আর অন্ধকারে স্তব্ধ জনপদ। হঠাৎ করেই স্তব্ধতা ভাঙে এক নারীর আর্তচিৎকার। মানসিক ভারসাম্যহীন এক অজ্ঞাত নারী প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করছেন রেলস্টেশনের এক কোণে। স্থানীয় অনেকেই তখন নির্লিপ্ত, কেউ এগিয়ে এলো না সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।

এই করুণ মুহূর্তে একমাত্র মানুষ হয়ে দাঁড়ালেন রেলস্টেশনে কর্মরত স্টেশন মাস্টার বাবুল হোসেন। নিস্তবদ্ধ, ঝড়-বৃষ্টির ওই গভীর রাতে স্থানীয় কারোর কোনো সহযোগীতা না পেয়ে, দিশেহারা অবস্থায় জরুরী হেল্প লাইন ৯৯৯ কল করেন। সেখান থেকে খবর পাঠানো হয় স্থানীয় নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পে।

কালবিলম্ব না করে সঙ্গে-সঙ্গে তিন পুলিশ সদস্য—এএসআই সোহেল রানা, কনস্টেবল মোর্শেদ আনোয়ার এবং কনস্টেবল খালিদ ঘটনাস্থলে পৌচ্ছান—কোনো রকম বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি, রাত কিংবা জীবন ঝুঁকি। দ্রুত তাঁরা ছুটে যান রূপদিয়া রেলস্টেশনে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, অজ্ঞাত ওই নারী বেদনায় ছটফট করছেন, আশপাশে কেউ নেই সহায়তায়। পরিস্থিতির জটিলতা অনুধাবন করে তিন পুলিশ সদস্য নিজেরাই এগিয়ে আসেন। তারা সাহায্য চাইলেও মেলে না আশপাশের কারোই সাড়া। একপর্যায়ে নারী ঘঠিত বিষয় হওয়ায় অবস্থা বেগতিক দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন।

ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে যান যশোর সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে অজ্ঞাত সেই নারী জন্ম দেন এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের। বর্তমানে মা ও সন্তান—দুজনেই সুস্থ রয়েছেন বলে রেলওয়ে ও স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এই পুরো ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিন পুলিশ সদস্য—এএসআই সোহেল রানা, কনস্টেবল মোর্শেদ আনোয়ার ও কনস্টেবল খালিদ ও স্টেশন মাস্টার বাবুল হোসেন।

তাঁদের সাহস, মানবিকতা ও কর্তব্যপরায়ণতা আজ রূপদিয়া বাসীর মুখে-মুখে প্রশংসিত। একজন অসহায় নারীর জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই তিন পুলিশ সদস্যের নিঃস্বার্থ পদক্ষেপ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবিকতা এখনও বেঁচে আছে। রাষ্ট্রের পোশাকধারী এই ত্রয়ী শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয়, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকলেন। এব্যাপারে নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত তিন পুলিশ সদস্য বলেন-

“ঝড়, রাত কিংবা ভয়—কিছুই আমাদের থামাতে পারেনি। একজন মা ও সন্তানের জীবন বাঁচাতে পারাটা আমাদের দায়িত্ব ছিল, আর সেটাই করেছি।”