রাশিয়ায় নজর থাকবে যে গোলরক্ষকদের দিকে

স্পোর্টস ডেস্ক: আগামী ১৪ই জুন রাশিয়ায় বসবে ফিফা বিশ্বকাপের ২১তম আসর। তার আগে ইউরোপ সেরার আসর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে এক ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক রাতের সম্মুখীন হয়েছেন লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিউস। জার্মান এ গোলরক্ষকের ভুলে দুটি গোল উপহার পায় রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্বকাপের সব গোলরক্ষকরা এখন সমানভাবে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন যাতে করে কারিউসের মতো একই স্পটলাইটে নিজেদের বসতে না হয়। যদিও কারিউসকে বিশ্বকাপ দলে ডাকেননি জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। কিন্তু ডেভিড ডি গেয়া, ম্যানুয়েল নয়্যার ও কেইলর নাভাসের মতো অন্য গোলরক্ষকদের দেশের হয়ে সেরা পারফরম্যান্সের সুযোগ থাকছে এবারের বিশ্বকাপেই।

football newsআগের দুটি বিশ্বকাপে সেরা গোলদাতার পুরস্কার (গোল্ডেন গ্লাভস) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইকার ক্যাসিয়াস ও ম্যানুয়েল নয়্যার। তবে, এই বছর ইনজুরির কারণে মৌসুমের বেশিরভাগ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন নয়্যার। অন্যদিকে ক্যাসিয়াসতো এবারের বিশ্বকাপে স্পেন দলে জায়গাই পাননি। কিন্তু তার উত্তরাধিকারী ডি গেয়াও বিশ্বমানের গোলরক্ষক। তেমনি পাঁচ জন গোলরক্ষকের দিকে তাকানো যাক, যারা বিশ্বকাপে জ্বলে ওঠার মতো প্রতিযোগী।

থিবো কোর্তোয়া (বেলজিয়াম)
লিভারপুলের সিমন মিগনোলেট থাকার পরও থিবো কোর্তোয়াই বেলজিয়ামের একনম্বর পছন্দের গোলরক্ষক। বেলজিয়ামের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলরক্ষক হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর দেশের জার্সিতে এখন পর্যন্ত ৫৫টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। গত ব্রাজিল বিশ্বকাপেও প্রতিটি ম্যাচে দলের প্রথম একাদশে ছিলেন তিনি। গত আসরে কোর্য়াটার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া বেলজিয়াম এবার আরো বেশি শক্তিশালী। এ বছর আরো সামনে এগুতে পারে হ্যাজার্ড-লুকাকুদের দল। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা কোর্তোয়া বিশ্বকাপের লম্বা গোলরক্ষকদেরও একজন। সেট পিচ (ফ্রি-কিক, কর্নার) এবং বাতাসে ভেসে বল আটকানোর দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে এ ২৬ বছর বয়সী কোর্তোয়ার।

অ্যালিসন বেকার (ব্রাজিল)
ব্রাজিল দলে অ্যালিসন বেকারের প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে অভিষেক মৌসুম দুর্দান্ত পারফর্ম করা এডারসন। এবারের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপাও জিতেছে সিটি। কিন্তু তারপরও বিশ্বকাপ মঞ্চে একনম্বর পছন্দ হিসেবে সেলেসাওদের গোলপোস্ট সামলাবেন অ্যালিসনই। ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার হয়ে নিজের দ্বিতীয় মৌসুমটা দারুণ কাটিয়েছেন তিনি। এ মৌসুমে ইতালিয়ান সিরি আ’তে ৩৪ ম্যাচে দলের গোলপোস্ট সামলেছেন অ্যালিসন। এর মধ্যে ১৫ ম্যাচেই ক্লিনসিট ছিলেন তিনি। আসরে ম্যাচ প্রতি গোল হজমের গড় মাত্র ০.৭৯। প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩.৪৯টি করে গোল সেভ করেছেন অ্যালিসন। সফলতার হার ৮৩%। যদিও গোল সেভের ক্ষেত্রে সফলতার হার ৯০ ভাগের বেশি বলে দাবি করেন তিনি। এরইমধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলোর নজরেও রয়েছেন তিনি। লিভারপুল তাকে দলে নিতে খুবই আগ্রহী। রোমায় নজরকাড়া মৌসুম কাটানোর পর এবার বিশ্বকাপ মঞ্চে নজরেই থাকবেন অ্যালিসন।

ম্যানুয়েল নয়্যার (জার্মানি)
ইনজুরির কারণে এবারের মৌসুমে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে মাত্র চার ম্যাচ খেলেছেন নয়্যার। এর মধ্যে এক ম্যাচে গোল হজম করতে হয়েছে তাকে। তার জায়গা নিতে প্রস্তুত রয়েছেন বার্নড লিনো ও মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগেন। জার্মান জাতীয় দলের কোচ অবশ্য নয়্যারের দক্ষতার ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তবে, বিশ্বকাপের মূল একাদশে খেলতে হলে এ বায়ার্ন তারকাকে অবশ্যই পুরোপুরি ফিট প্রমাণ করতে হবে। গত কনফেডারেশনস কাপে দলের গোলবার সামলেছেন স্টেগেন। অনেক সমর্থক তাই বার্সেলোনা গোলরক্ষককে এবারের বিশ্বকাপ মঞ্চে দেখতে চাইবেন। তারপরও অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে জার্মান কোচ জোয়াকিম লো ৩১ বছরের নয়্যারের ওপরই আস্থা রাখবেন বলে জানিয়েছেন। কারণও আছে, কোচ লোর অধীনেই ২০১৪ বিশ্বকাপে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার (গোল্ডেন গ্লাভস) জেতেন নয়্যার।

ওজিচিক সেজনি (পোল্যান্ড)
ইতালিয়ান কিংবদন্তি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনের জন্য জুভেন্টাসে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ওজিচিক সেজনি। তবে, এবার বুফন ক্লাব ছাড়লে নিশ্চিতভাবেই জুভদের একনম্বর গোলরক্ষক হবেন তিনি। পোল্যান্ড গত দুই বিশ্বকাপে অংশ নিতে ব্যর্থ হলেও এবারের বিশ্বকাপ অভিষেক হচ্ছে সেজনির। ২০০৬ বিশ্বকাপের দলে থাকা আর্সেনালের সাবেক গোলরক্ষক লুকাজ ফ্যাবিয়াস্কিও রয়েছেন এবারের আসরে। তারপরও রাশিয়া বিশ্বকাপে দেশের একনম্বর ভরসা হবেন সেজনিই। ক্যারিয়ারের বেশিভাগ সময় আর্সেনালে কাটিয়েছেন তিনি। গানারদের সঙ্গে থাকার সময় ড্রেসিং রুমে ধূমপান করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সেজনি। তবে, লোনে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর নিজের ভেতরে পরিপক্বতা এনেছেন। অন্যদের পাশাপাশি রাশিয়ায় নজরে থাকবেন সেজনিও।

ডেভিড ডি গেয়া (স্পেন)
রাশিয়া বিশ্বকাপে সেরা গোলরক্ষকের অ্যাওয়ার্ড জয়ের অন্যতম দাবিদার ডেভিড ডি গেয়া। ১৮ ম্যাচে গোল হজম না করে (ক্লিন শিট) গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলদাতার পুরস্কার (গোল্ডেন গ্লোভ) পুরস্কার জেতেন তিনি। পেপে রেইনা ও ইকার ক্যাসিয়াসকে পেছনে ফেলে স্পেনের ২৩ সদস্যের দলে গোলরক্ষকের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন ডি গেয়া। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের এবারের মৌসুমে ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩.৫৮টি করে গোল সেভ করেছেন তিনি। সফলতার হার ৮৬ ভাগ। এবারের আসরে কোন গোলরক্ষকের যেটা সর্বোচ্চ সফলতার হার। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানটাও খুব খারাপ না ডি গেয়ার। স্পেনের জার্সি গায়ে ২৭ ম্যাচে গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে ১৪ ম্যাচেই ক্লিন সিট ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে সেরা হওয়ার সুযোগ ডি গেয়ার সামনে।