রশিদ ঘূর্ণিতে আফগানদের বিপক্ষে টাইগারদের হার

mushfikস্পোর্টস ডেস্ক: আফগানদের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে তেমন লড়াইও করতে পারল না টাইগাররা। ম্যাচে মুশফিক-লিটন দাশের জুটিতে একটা লড়াই জমে উঠার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু রশিদ খানের অসাধারণ স্পেল সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয় টাইগার ব্যাটিং লাইনআপকে। বিপরীতে ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশাল ব্যবধানে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৪৫ রানে জিতে নিল আফগানরা।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৬৭ রান তেমন আহামরি রান নয়। বিশেষ করে সাকিব-তামিম আর মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানরা যে দলে থাকে সে দলের সমর্থকরা এ রান ডিঙিয়ে জয়ের আশা করা মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। কিন্তু এ রান করতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে টাইগাররা। বিশেষ করে টপঅর্ডারের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের কারণে নিশ্চিত জয় বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।

আজও টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার চিত্র দেখেছে টাইগার সমর্থকরা।

আফগানদের দেয়া ১৬৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোরের জবাবে খেলতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে যান দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আফগান বোলার মুজিবের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ফিরে যান তামিম।

তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। লিটন দাশকে সঙ্গে নিয়ে দেখেশোনে খেলতে থাকেন তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শাপোর জারদানকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আজ ভালোকিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

তৃতীয় ওভারে মুজিবুর রহমানকেও বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। কিন্তু সেটি আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। চতুর্থ ওভারে মোহাম্মদ নবীর বলে বল বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে উইকেটকিপার শেহজাদের হাতে ধরা দিয়ে বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। ১৫ বলে রান করেন তিনি।

দলীয় ২১ রানে তামিম-সাকিবের উইকেট হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম।

তৃতীয় উইকেটে তারা সাবলিল ব্যাটিং করে যান। এই জুটিতে তারা ৪৩ রান যোগ করেন। মুশফিক-লিটনের এমন ব্যাটিংয়ের পর জয়ের পাল্লা কিছুটা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সপ্তম ওভারে দলীয় রান তখন দুই উইকেটে ৬৪। এসময় বিশেষ করে লিটন দাশ উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। তার ব্যাট থেকে রানও আসছিল। কিন্তু মোহাম্মদ নবীকে অযথা শট খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন এ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। মাত্র ২০ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ৩০ রান করেছিলেন লিটন।

প্রথম ১০ ওভারে ৮০ রান করার পর বিদায় নেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম।

বর্তমান বিশ্বে এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত লেগস্পিনার রশিদ খানকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক (২০)। পরের বলেই সাব্বিরও রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন। রশিদ খানের গুগলিতে পরাস্ত হয়ে এলডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মারমুখী এ ব্যাটসম্যান।

১০.২ ওভারে ৭৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। দলের এমন কঠিন পরিস্থিতে হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

অষ্টম উইকেটে তারা উইকেটে ধরে খেললেও রান রেট তাড়া করে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত এক ওভার বাকি থাকতেই ১২২ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির সিরজের প্রথম খেলায় প্রথমে ব্যাট করে আট উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান সংগ্রহ করে আফগানরা।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ। এছাড়া ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন সামউল্লাহ সেনোয়ারি।

শেষ দিকে টর্নেডো ইনিংস উপহার দেন শফিকুল্লাহ। মাত্র ৮ বলে ২৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন আফগান এ তরুণ।

এছাড়া উসমান গনি ২৬, অধিনায়ক আসগর স্টনিকজা ২৫ রান করেন।

রোববার ভারতের দেরাদুনের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টসে জিতে আফগানিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাচ্ছিলেন আফগান দুই ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ ও উসমান গনি।

তাদের এই জুটি কোনোভাবেই ভাঙ্গা যাচ্ছিল না। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন পেস বোলার ‍রুবেল হোসেন। ইনিংসের ৯ম ওভারে দলীয় ৬২ রানে উসমান গনিকে (২৬) বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান রুবেল।

শুরু থেকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাওয়া শেহজাদকে সাজঘরে ফেরান সাকিব আল হাসান। ১২তম ওভারে দলীয় ৮৬ রানের মাথায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এ পিঞ্চ হিটার। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৭ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৪০ রান করেন আফগান এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

সাকিব আল হাসানের আঘাতের পর আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৪তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই সফলতা পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে নজিবুল্লাহ জাদরান এবং পঞ্চম বলে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবিকে ফেরান রিয়াদ। নজিবুল্লাহ ২ রান করলেও রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। মাত্র ৬ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপের মুখে পড়ে যায় আফগানিস্তান।

শেষ ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলে দেয়া সামউল্লাহ সেনোয়ারিকে সাজঘরের পথ দেখান তরুণ পেস বোলার আবু জায়েদ রাহি। প্যাভেলিয়নে ফেরার আগে ১৮ বলে তিন চার ও তিন ছক্কায় ৩৬ রান করেন সেনোয়ারি।

সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা শফিকুল্লাহ নিজের ইনিংসের শুরু থেকেই গেইল স্টাইলে ব্যাটিং করে যান। মাত্র ৮ বলে তিন ছয় এবং এক চারের সাহায্যে ২৮ রান করা ২৮ বছর বয়সী এই আফগানকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরির কারণে সুযোগ পাওয়া আবুল হাসান রাজু।

বাংলাদেশ দলের হয়ে মাহমুদউল্লাহ ও আবুল হাসান দুটি করে উইকেট নেন। এছাড়া সাকিব, রুবেল ও আবু জায়েদ রাহী একটি করে উইকেট নেন।