ডেস্ক রিপোর্ট: বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সর্বশেষ ও দেশের ৪৭তম বাজেট পেশ উপলক্ষে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের সরব উপস্থিতি ছিল সংসদ অধিবেশনে।উৎসবমুখর পরিবেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে মন্ত্রী সভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট পেশ উপলক্ষে অধিবেশন কক্ষ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সংসদ গ্যালারি থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ সর্বত্রই ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেলা ১২টা ৫৩ মিনিটে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের দ্বাদশতম বাজেট প্রস্তাবনা পড়া শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামের বাজেট বক্তৃতা ৪টা ২ মিনিটে শেষ হয়। বক্তৃতার মাঝে ৩০ মিনিটের জন্য অধিবেশনের বিরতি দেওয়া হয়।
বাজেট বক্তৃতা শেষে পুনরায় নিজ আসনে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘আমি পুরো বক্তব্যটি দাঁড়িয়ে দিতে পারিনি। রোজার মাসে অনেক নিয়মও আমি মানতে পারিনি। শুধুমাত্র বয়সের কারণে এটি করতে হয়েছে। এজন্য সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ এরপর সংসদে অর্থবিল উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট উপস্থাপন শেষে স্পিকার আগামী ১০ জুন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন মুলতবি করেন।
উৎসবমুখর সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুনতে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিচারপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পিএসসি চেয়ারম্যান, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকসহ অন্যরা বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুটকেস হাতে বেলা পৌনে ১২টায় বাজেট অধিবেশনে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। বাজেট বক্তৃতার প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ অর্থমন্ত্রী পড়ে শোনান। কিছু অংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়। শারীরিক কারণে অর্থমন্ত্রী দাঁড়িয়ে ও বসেই বাজেট বক্তৃতা করেন। এ সময় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাজেট বক্তৃতার মাঝে মাঝে সরকারি দলের সদস্যদের সঙ্গে টেবিল চাপড়ে তারাও অর্থমন্ত্রীকে উৎসাহ যোগান।
বাজেট বক্তৃতার আগেই সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রী সভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
বাজেট পেশ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। বৈধ পাস ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি সংসদ ভবন এলাকায়। এমনকি দর্শক গ্যালারিতে পাস ইস্যুতেও ছিল কড়াকড়ি। র্যাব-পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো ভবনে নিরাপত্তা ঘেরাটোপ গড়ে তোলেন। বাজেট বক্তৃতার পরে আমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে নির্বিঘ্নে বের হতে পারেন সেজন্য সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার পিজিয়ন হলের গেটটিও খোলা রাখা হয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল আলাদাভাবে।
বাজেট বক্তৃতা শেষে অর্থমন্ত্রী অর্থ বিল- ২০১৮ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিলটি আগামী ২৮ জুন পাস হবে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্য ৪০ ঘণ্টা আলোচনা করবেন।