পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বাজেটের যেসব ইস্যু

dse cse stock marketডেস্ক রিপোর্ট: ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার দশম সংসদের ২১ তম অধিবেশন আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটের যেসব প্রস্তাবনা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

২০১৮-১৯ সালের বাজেটের লিখিত বক্তব্যে পুঁজিবাজার ইস্যুতে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ ব্যবহারের মাধ্যমে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়। এ দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ফ্লেটিং রেটি ট্রেজারি বন্ড (এফআরটিভি) চালু করতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গাইডলাইন ও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে ব্যাংকিং শিল্পে ইসলামী ব্যাংক প্রায় ২০ শতাংশ হলেও এখনও শরীয়াভিত্তিক কোনো সিকিউরিটিজ এর প্রচলন করা হয়নি। বর্তমানে আমরা শরীয়াভিত্তিক সিকিউরিটিজ প্রচলনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।

এছাড়া, সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের তথ্যভান্ডার প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে এর সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনায় অধিকতর শৃঙ্খলা আনয়ন সম্ভব হবে।

করপোরেট কর:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক ২০১৩ সারে অনুমোদিত ব্যাংক, বীমা ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার বর্তমানে ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভুত ব্যাংকের করহার ৪২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।

দেশে বর্তমানে করপোরেট করের আটটি স্তর রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ, তালিকাবহির্ভুত কোম্পানিকে ৩৫ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক, বীমা ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪০ শতাংশ, তালিকাবহির্ভুত ব্যাংক, বীমা ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪২.৫০ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংককে ৩৭.৫০ শতাংশ। সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ।

পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভুত কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ এবং কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশ করপোরেট কর দেওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ কর হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্য পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে ১২.৫০ শতাংশ এবং সবুজ কারাখানার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ কর হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তৈরি পোশাক:
দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতকে বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করা হয়। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে নিয়োজিত করদাতার করহার ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলে করহার ১২.৫ শতাংশ এবং গ্রীণ বিল্ডিং সার্টিফিকেশন রয়েছে এরুপ সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো পাবলিক লিমিটেড। তাই এখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বীমা খাত:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান ৪০ শতাংশ করহার থেকে কমিয়ে ৩৮.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্স্যুরেন্স পলিসির উপর ১৫ শতাংশ হাতের মূসক প্রদান করে থাকে। এ পলিসির বিপরীতে প্রযোজ্য সেবা প্রদানের জন্য একজন বীমা এজেন্ট নিয়োজিত থাকেন। এ বীমা এজেন্টের কমিশন মোট পলিসি মূল্য থেকেই প্রদান করা হয়। তাই সর্বমোট পলিসি মূল্য থেকে পূর্বেই মূসক পরিশোধ করায় বীমা এজেন্ট কমিশন বাবদ প্রদেয় মূসক দ্বৈতকর হয়। এ দ্বৈতকর পরিহারের উদ্দেশ্যে বীমা এজেন্ট কমিশনের উপর প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থাৎ করহার আড়াই শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স পলিসির উপর দ্বৈতকর প্রত্যাহারের মাধ্যমে বীমা খাতে সরকার বিশেষ জোর দিয়েছে।

প্রকৌশল খাত:
স্ক্র্যাপ আমদানির শুল্ক ১ হাজার থেকে কমিয়ে ৮০০ টাকা ও রড তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর আরোপিত সংরক্ষণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। এতে বাজারে রডের দাম কমতে পারে।