‘অসুস্থ অবস্থায়’ তারিককে হাসপাতাল থেকে রিলিজ!

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলায় আহত তরিকুল ইসলাম তারিককে ‘অসুস্থ অবস্থায়’ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় তারিককে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন তার সহপাঠী মতিউর রহমান। বর্তমানে তাকে রয়েল হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে।

মতিউর রহমান বলেন, ‘তরিকুলের অবস্থা ভালো হয়নি। বরং অবনতি হয়েছে। তার পায়ে শুধু ব্যান্ডেজ করা হয়েছে, এখনো প্ল্যাস্টারও হয়নি। সারারাত ব্যথায় কেঁদেছে। পা নড়াতেই পারছে না। এ অবস্থায় তাকে রিলিজ দেওয়া হলো।’

‘বিকেল চারটার দিকে রামেক থেকে পুলিশের কাছে তারেকের রিলিজপত্র দেওয়া হয়। পুলিশই তাকে ভর্তি করেছিল তাই। খুব সম্ভবত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতো। পরে গ্রেপ্তার না করে আমাদের হাতে তুলে দেয়। বিকেল পাঁচটার দিকে আমরা বন্ধুরা মিলে তাকে রয়েল হসপিটালে ভর্তি করেছি। এখনো তার চিকিৎসা শুরু হয়নি’ জানান মতিউর।

তারিকের এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, তারিকের ডান পা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এছাড়া মাথায় নয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

এর আগে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এমএকে শামসুদ্দিন জানিয়েছিলেন, ‘তার ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। চার সপ্তাহ পায়ের প্লাস্টার রাখা হবে। তার সারা শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে। এখন সম্পূর্ণ বিশ্রাম দরকার।’

তরিকুল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন ডা. সুব্রত কুমার প্রামাণিক।

২ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করলে রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, লতিফুল কবির মানিক, সহ-সভাপতি গোফরান গাজী, মিজানুর রহমান সিনহা, রমিজুল ইসলাম রিমু, সাদ্দাম হোসেন, আহমেদ সজীব, ছানোয়ার হোসেন সারোয়ার, আরিফ বিন জহির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুল জামিল সুস্ময়, হাসান লাবন, ইমতিয়াজ আহমেদ, কর্মী জন স্মিথ ও রাশেদ খান একযোগে আক্রমণ চালায়।

তবে এ বিষয়ে ডা. সুব্রত কুমার প্রামাণিক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় রিলিজ দেওয়ায় সন্দেহ ও আশঙ্কা প্রকাশ করে তরিকুলের একাধিক সহপাঠী।

অন্যদিকে এখন অবধি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিভাগের কেউই তরিকুলকে দেখতে যাননি বলেও জানান মতিউর। বন্ধুদের টাকায় তরিকুলকে রয়েল হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকের ওপর দিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না। তারা যদি তরিকুলকে রিলিজ দেয়, তাহলে দিবে। এটা তো ডাক্তারেরই কাজ। তারা যা ভাল মনে করেন তাই করবেন।’