ব্যাটসম্যানদের হাতেই এখন বাংলাদেশের ফাইনাল খেলার চাবি

টেস্ট ক্রিকেটে কথিত আছে, যতো ভালোই ব্যাটিং করুন না কেনো, আপনাকে ম্যাচ জেতাবে বোলাররাই। ব্যাটসম্যানরা হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা উইকেটে থেকে ড্র এনে দিতে পারবে; কিন্তু ম্যাচ জিততে এগিয়ে আসতে হবে বোলারদেরকেই।

যদিও ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন কোনো কথা প্রচলিত নেই। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে, ছোট একটা ক্যামিও ইনিংসে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যে কোনো ব্যাটসম্যান। জিতিয়ে দিতে পারেন যে কোনো হারতে বসা ম্যাচও। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটেও যদি টেস্টের মতোই বোলারদের প্রধান ভূমিকার কথা প্রচলিত থাকতো, তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভাবনায় এখন থাকতো ব্যাটসম্যানরাই।

চলতি এশিয়া কাপে এখনো পর্যন্ত ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। একদম শুরুর ম্যাচে মাত্র ১ রানেই সাজঘরে ফিরেছিলেন দুই ব্যাটসম্যান, দলীয় ৩ রানের মাথায় ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। সেখান থেকে টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত টাইগারদের একমাত্র শতরানের জুটি গড়েন মুশফিকুর রহীম ও মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের ১৩১ রানের জুটিই যেন ‘ভালো’ ব্যাটিংয়ের শেষ প্রদর্শনী।

সে ম্যাচেই ১৩১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিটির পরেও আড়াইশোর নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। যা দূর হয় তামিম ইকবালের এক হাতে ব্যাট করার সাহসিকতা ও মুশফিকের বীরোচিত ১৪৪ রানের কারণে। বাংলাদেশ দলের ইনিংস থামে ২৬১ রানে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের দুইশো পেরুনোর একমাত্র নজিরও এটি।

সে ম্যাচে মাশরাফি, মিরাজদের দাপুটে বোলিংয়ে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। বোলারদের দাপট চলমান থাকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও। শেষ দশ ওভারে ৯৭ রান সত্ত্বেও নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানিস্তান।

যা তাড়া করতে নেমে স্মরণকালের সবচেয়ে হতশ্রী ব্যাটিংয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশ। মাত্র ২.৮২ রান রেটে ৪২.১ ওভার ব্যাট করে ১১৯ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। যা কিনা গত পাঁচ বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে অলআউট হওয়া ইনিংসগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। পরাজয়ের ব্যবধান ১৩৬ রানের।

হতশ্রী এই ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত থাকে ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেও। এদিন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সবাই ফিরে যান দলীয় ১০১ রানের মাথায়। সেখান থেকে মেহেদি মিরাজ ও মাশরাফি বিন মর্তুজার লড়াকু ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পায় ১৭৩ রানের সংগ্রহ। যা কিনা খুব সহজেই ৭ উইকেট ও ৮২ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে ভারত।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ে বাংলাদেশ দলের ফাইনাল খেলার সমীকরণে কোন প্রভাব পড়েনি। তবে ভারতের বিপক্ষে হারের ফলে ফাইনাল খেলার স্বপ্নে লেগেছে বড়সড় ধাক্কা। সুপার ফোরের বাকি থাকা দুই ম্যাচে জয় ব্যতীত কোনো পথ খোলা নেই। তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য তিন দলের ফলাফলের দিকেও। বেশ কিছু সমীকরণ মিললেই এখন বাংলাদেশ খেলতে পারবে এশিয়া কাপের ফাইনালে।

তবে সমীকরণ মেলার আগে নিশ্চিত করতে হবে দুই ম্যাচের জয়। যে কোনো এক ম্যাচ হেরে গেলেও পুরোপুরি ভাগ্যের উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের ফাইনাল খেলার টিকিট। আর এই ‘মাস্ট উইন’ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ দলকে নির্ভার করতে পারে কেবল ব্যাটসম্যানরাই।

এখনো পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচের প্রথমটিতে ২৬১ ও পরের দুইটি মিলিয়ে বাংলাদেশ করেছে ২৯২ (১১৯+১৭৩) রান। তিন ম্যাচের মধ্যে একটি না খেলেও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহীম। প্রথম ম্যাচে ১৪৪ রান করা মুশফিকের মোট রান ১৬৫।

মুশফিকের ১৪৪ ব্যতীত এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস এসেছে মাত্র একটি, মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাট থেকে। প্রথম ম্যাচে ৬৩ রান করা মিঠুন আবার ব্যর্থ পরের দুই ম্যাচে। তার মোট রান ৭৪ (৬৩+২+৯)। মুশফিক-মিঠুনের পর রান তোলার তালিকায় তৃতীয় নামটি বেশ অবাক করার মতোই। যা কিনা তুলে ধরে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের চূড়ান্ত ব্যর্থতার চিত্রটাও।

তিন ম্যাচে যথাক্রমে ১৫, ৪ ও ৪২ রান নিয়ে মোট ৬১ রান করেই তালিকার তিন নম্বর নামটি আট নম্বরে ব্যাট করা অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তালিকার তিন নম্বরে মিরাজের নামটিই মূলতঃ প্রমাণ করে দেয় টাইগার ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশার কথা।

বাকী স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের কেউই তিন ম্যাচ মিলিয়েও করতে পারেননি ৬০ রান। যার মাশুল বাংলাদেশ দলকে দিতে হয়েছে পরপর দুই ম্যাচে বিব্রতকর হারের মাধ্যমে। ভারতের বিপক্ষে হারের পরই টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি জানিয়েছেন, হারের দায় নিতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই, এখনো পর্যন্ত সন্তোষজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন বোলাররাই।

অধিনায়কের কথার মধ্যেই নিহিত ছিলো ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে উত্তরণের পথ। টানা দুই ম্যাচে হারের দায় যেমন টাইগার ব্যাটসম্যানদের, তেমনি জয়ের কক্ষে ফেরানোর চাবিকাঠিটাও সাকিব, মুশফিক, মিঠুনদের হাতেই।

আগের তিন ম্যাচ মিলিয়েও ৬০ রান করতে ব্যর্থ হওয়া সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, লিটনদের রোববার আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচেই খেলতে হবে ষাটোর্ধ ইনিংস অথবা দেখাতে হবে রশিদ-মুজিবদের সামলানোর ইতিবাচক মানসিকতা। নচেৎ ব্যাটসম্যানরা টানা তৃতীয়বারের মতো ব্যর্থ হলে ফাইনাল খেলার দরজা আর খুলবে না বাংলাদেশের জন্য।