অন্তর্বাস পরে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা…

অন্ধকার রাত। এখানে ওখানে মোমবাতির মতো আলো জ্বলছে। অপরিচ্ছন্ন এক সড়ক অন্ধকার পার্কের ভিতরে। ডানে-বামে কোনো লোকালয় বা জনবসতি চোখে পড়ে না। শুধু লাইন দিয়ে গাছ লাগানো। তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে পার্ক করা সব গাড়ি। তাতে মোমের মতো আলোতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে নারীদের মুখ। তাদের পরণে অন্তর্বাসের চেয়ে বেশি কিছু নেই।

দেখেই বোঝা যায় তারা দেহপসারিণী। অর্থের বিনিময়ে ওই পার্কে এসে ভিড় করেছেন। ফাঁকা সড়ক বেয়ে এগিয়ে আসেন কোট-টাই পরা কোনো ভদ্রলোক। দু’চার সেকেন্ড কথা বলেন। ব্যাস, চুক্তি হয়ে যায়। ওই যুবতী তার খদ্দেরকে নিয়ে ছুটে যান গাছের আড়ালে। আদিম নেশায় মাতোয়ারা হন তারা। বিনিময়ে খদ্দের তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে যান কিছু নগদ অর্থ। তাদেরই একজন নাদেজে (প্রকৃত নাম নয়)। তিনি অনেকদিন ধরে এই ব্যবসা করেছেন। তারপর এক পর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন।

নাদেজে আস্তে আস্তে সুন্দর করে কথা বলেন। পালিয়ে এলেও তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত আমার নিজের ওপর কোনো আশা নেই। আমার ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিয়েছে আমার অতীত।

প্যারিস থেকে একটু বাইরে পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বিশাল পার্ক বোইস ডে ভিনসেনস। সেখানে আছে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ শিখানোর স্কুল ও একটি চিড়িয়াখানা। পাশাপাশি ওই পার্ক ও আশপাশের এলাকা মানবপাচারকারীদের একটি নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছে। এর মধ্য এলাকা দিয়ে যে সড়কটি গিয়েছে তা মানবপাচারের সবচেয়ে বড় চ্যানেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ পথেই নাইজেরিয়া থেকে হাজার হাজার নারী ও বালিকা, শিশুদের পাচার করা হচ্ছে ইউরোপে। তাদেরই মতো নাদেজে। তিনি বলেছেন, তাকে নাইজেরিয়া থেকে ফ্রান্সে পাচার করা হয়েছে এবং সেখানে পৌঁছার পর তাকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পেশায় তাকে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রতিজন খদ্দেরের মনোরঞ্জনের বিপরীতে পান ২০ ইউরো বা ২৩ ডলার। এই অর্থ দিয়ে তাকে প্রথমে নাইজেরিয়ান ‘ম্যাডাম’কে ঋণ পরিশোধ করতে হয় তাকে।

নাদেজে বড় হয়ে ওঠেন নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে। তিনি বলেন, যখন তার বয়স মাত্র ৬ বছর, তখনই তার প্রতিবেশী একদল পুরুষ তাকে গণধর্ষণ করে। এ অবস্থায় তার এক ফুপুর কাছে তাকে পাঠিয়ে দেন তার পিতামাতা।

ফুপুর কাছে থাকার পর একবার স্থানীয় এক গ্যাংয়ের এক সদস্য তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তার ফুপু। এ জন্য তাকে হত্যা করে তারা। নাদেজের বয়স যখন ১৫ বছর তখন তিনি আরো একবার ধর্ষিত হন। এরপর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে গর্ভপাত করাতে হয়। এ সময় নাদেজে একা হয়ে পড়েন। তাকে দেখভাল করার জন্য কেউ নেই। ফলে তাকে শিকারে পরিণত করা খুব সহজ হয়ে যায় পাচারকারীদের কাছে। এমন সময় লাগোসে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি তাকে পরিচারিকার কাজ নেয়ার প্রস্তাব দেন ইউরোপে। বলেন, সেখানে গেলে নাদেজে অনেক ভাল থাকতে পারবেন। নাদেজে বলেন, আমাকে ওই ম্যাডাম বলেছিলেন ইউরোপ হলো স্বর্গের মতো। কিন্তু বাস্তবে যা দেখলাম তা হলো ফ্রাই করার প্যান বা কড়াই থেকে লাফিয়ে আগুনে পড়ার মতো।
(চলবে)
অনলাইন সিএনএস অবলম্বনে