নাঈমকে কেন্দ্র করে ভয়ে জীবন ভিক্ষা জয়ের (ভিডিও)

প্রাণনাশের শঙ্কায় রয়েছেন অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও অন্য সকালের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন। সোমবার রাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন জনপ্রিয় এবং একইসঙ্গে সমালোচিত এই উপস্থাপক। সেই ভিডিওর এক অংশে নিজের প্রাণ ভিক্ষা চান তিনি।

সম্প্রতি নাঈম নামে এক শিশুর সাক্ষাৎকার নেন জয়। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় এই নাঈম ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপ চেপে ধরে সবার নজর কাড়ে, প্রশংসা কুড়ায়। নাঈমের এই সাহসিকতায় খুশি হয়ে তার পরিবারকে চার লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন এক অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী।

জয় তার সাক্ষাৎকারে নাঈমকে জিজ্ঞেস করেন, এই টাকা দিয়ে সে কী করবে। উত্তরে নাঈম বলে, চার লাখ টাকা সে এতিমখানায় দান করবে। এর কারণ জানতে চাইলে নাঈম বলে, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। তাই সে টাকাটা এতিমখানায় দিতে চায়।

পরে সাংবাদিক ও গায়ক আমিরুল মোমেনিন মানিকও নাঈমের সাক্ষাৎকার নেন। সেখানে তিনি নাঈমকে খালেদা জিয়া সম্পর্কে দেয়া বিতর্কিত ওই উত্তর সম্পর্কে জানতে চান। নাঈম তখন বলে, তাকে এই কথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন আগে যিনি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। অর্থাৎ অভিযোগের আঙুল তোলা হয় জয়ের দিকেই।

পরের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হতেই তুমুল সমালোচনা শুরু হয় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমজুড়ে। সেসব মাধ্যমে জয়কে নাকি কে বা কারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। সেসব কথাই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তুলে ধরে তিনি। ভিডিও বার্তায় বলা জয়ের সে কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আসসালামু আলাইকুম। আমি এখন আপনাদের সামনে কিছু কথা বলব। কথাগুলো অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনারা সবাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত এবং আমাকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে। আমাকে গালাগালি করছেন। কিন্তু আমি একটি কথা আপনাদের খুব দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এই যে নাঈম ছেলেটির আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি, আমি সবসময় সাক্ষাৎকারের অনুষ্ঠান করি, কিন্তু আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, নাঈমকে আমি কোনো কথা শিখিয়ে দেইনি।’

‘নাঈম যে বক্তব্য দিয়েছে, সে কোথাও থেকে শিখে এসেছে কী না আমি জানি না। কিন্তু সে আমার অনুষ্ঠানে বসে নিজের দায়িত্বে এ কথা বলেছে। কোনো জাতীয় নেতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সাহস আমার নেই এবং আমি করতেও চাই না। কারণ সবাই সম্মানিত। জাতীয় নেতা যারা একসময় ক্ষমতায় ছিলেন বা এখন ক্ষমতায় আছেন সবাই সম্মানিত। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা সাজে না। হ্যাঁ, আমি বিশেষ দলের সমর্থক হতে পারি। কিন্তু আমি অন্য দল নিয়ে কটূক্তি করার বা অন্য দলের নেতা নিয়ে কটূক্তি করার অধিকার রাখি না এবং আমি সেটা করিও না।’

‘আমার সাক্ষাৎকারে ছোট্ট ছেলে নাঈমের ওরকম উত্তর শুনে আমি হতবাক হয়েছি। এ জন্য দ্বিতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করেছি। আমার সাক্ষাৎকারে এমন উত্তর আমি নিজেও আশা করিনি। কিন্তু উত্তর হয়ে গেছে। আমি একটা দায়িত্ব নিতে পারি যে, কেন আমি সেটা প্রচার করেছি? আমি মানুষ যা বলে তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। দর্শকের কাছে আমি সবকিছু সঠিকভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করি।’

আপনারা যারা আমাকে ভুল বুঝছেন, আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করতে পারি যে, আপনারা আমাকে একদম মিছেমিছি ভুল বুঝছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড করেছেন, আমাকে অপমান করেছেন, আমাকে আপনারা হুমকি দিচ্ছেন, আমার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু আমি বলব যে, আমি এর জন্য দায়ী না। যে যার বক্তব্য দেয়, কোনো বক্তব্য শেখানো নয়।’

‘নাঈমের সঙ্গে তার বাবা-মা ছিল। তার বক্তব্য সে নিজের দায়িত্বে দিয়েছে। সে নিজে কোথাও থেকে শিখে এসেছে কী না আমি বলতে পারবো না। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আমি এটা বলিনি। তাকে শিখাইনি। যদি কখনো কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি শিখিয়েছি তাহলে আমি কোনো দিন উপস্থাপনা করবো না। আপনারা না চাইলে আমি এই উপস্থাপনা পেশাই ছেড়ে দেবো।’

‘আপনারা আমাকে অপমান অপদস্থ ও হুমকি দেবেন না। আমি বাঁচতে চাই, থাকতে চাই, কাজ করতে চাই। আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবার কাছে আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই। কেননা আমি যে ধরনের হুমকি পাচ্ছি সে ধরনের হুমকি নিয়ে আসলে বেঁচে থাকা মুশকিল। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন ও আমাকে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।’