এরশাদ মারা গেছেন কি না, জানাতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ

high-court

মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন কি না, তা জানাতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরীফ এ এম রেজা জাকের এ নির্দেশ দেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আসাদুজ্জামান খান রচি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মারা গেছেন মর্মে আদালতকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অবহিত করা হয়। আদালত সে বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দকে এরশাদ মারা গেছেন কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন ও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ অক্টোবর নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ছিলেন আবুল মঞ্জুর। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে মঞ্জুরকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও মৃত্যু সনদ পেতে দেরী হওয়ায় ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

দীর্ঘ ১৯ বছর মামলাটি বিভিন্ন কারণে ঝুলে ছিল। বিচার চলাকালে পর্যায়ক্রমে ২২ জন বিচারক বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। এর মধ্যে ২২ জন বিচারক বিভিন্ন কারণে বদলি হয়েছেন।

২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩তম বিচারক হিসেবে ঢাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ১০ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন বিচারক হোসনে আরা আক্তার বদলি হওয়ায় মামলার রায় অনিশ্চিত হয়ে যায়। এর পরে একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি কৌঁসুলি আসাদুজ্জামান খান রচি মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪তম বিচারক খন্দকার হাসান মাহমুদ ফিরোজ মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

এদিকে, মামলার অন্য দুই আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসেরের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে। এ মামলায় অভিযোগপত্রের ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন প্রধান আসামি এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেন তিনি।

গত ১৪ জুলাই সকাল পৌনে ৮টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর পরে তাঁকে ১৬ জুলাই রংপুরে নিজ বাসভবন পল্লী নিবাসের লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।