রাবি শিক্ষিকার বাসায় শিক্ষার্থী ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ : প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষিকা অধ্যাপক বিথীকা বণিকের বাসায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের ঘটনায় ওই শিক্ষিকাকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনের ভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে এই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান।

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, তোমরা যে দাবি করেছো তা আমি দেখেছি। তোমাদের সেই দাবিগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে। আর যে ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার সঠিক বিচার করা হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা দুই ঘন্টার মধ্যে অধ্যাপক বিথীকা বণিকের হল প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ দাবি করলে উপাচার্য বলেন, দুই ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রক্রিয়া আছে। সেই নিয়মানুসারে কাজ করা হবে। এজন্য দুই-তিন দিন সময় দিতে হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা না মানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হলো। কিন্তু এজন্য একটু সময় দিতে হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেন।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আগামী রবিবারের মধ্যে যদি অধ্যাপক বিথীকা বণিককে থেকে অব্যাহতি না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো। এর আগে ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। পরে শিক্ষার্থীরা ওই হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।

ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবর কয়েকটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা, বিথিকা বণিককে প্রাথমিক স্টেটমেন্ট দেয়া, মেয়েটির পরিবারে কোন প্রকার চাপ না দেয়া, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার পদত্যাগ করা, কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছে তার ক্ষমা চাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নেওয়া প্রতিটি হল ও বিভাগে ধর্ষণ বিরোধী সেল গঠন করা এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, এ ঘটনার জন্য অভিযুক্তকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন।

আন্দোলনে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী এসএমতমাল বলেন, আমাদের এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছে। ওই মেয়ে সেই রাতে বিথীকা বণিকের বাড়িতেই ছিল। বিথিকা বণিক যে হলের প্রাধ্যক্ষ সেই হলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী থাকেন। রাতে ম্যাম যখন হলে কোন একটা সমস্যার কথা বলে হলে আসতে চেয়েছে তখন ম্যাম তাকে নিয়ে আসেনি। একটা মেয়েকে যখন তিনি নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তাহলে হলের এতোগুলো মেয়ের নিরাপত্তা কিভাবে দেবে? তাই আমরা অবিলম্বে বিথীকা বণিকের পদত্যাগ চাই।

শুধু নিরাপত্তাই নয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উঠে এসেছে নানা অভিযোগ। জানতে চাইলে আন্দোলনরত সেই হলের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা, হলের মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও বাজে মন্তব্য করাসহ অনেক অভিযোগ করে তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষর পদত্যাগ দাবি জানায় এবং সেই সাথে তার এহেন অসদাচারণের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বিথীকা বণিকের ভাই শ্যামল বণিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর ধরমপুর এলাকার যোজক টাওয়ারে ওই শিক্ষীকার বাসা থেকে অভিযুক্তকে আটকের পর নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ওই শিক্ষিকার বাসায় তার মেয়েকে পড়াতেন।

তবে অধ্যাপক বিথীকা বণিকের দাবি, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। গত রাতে এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি হলে চলে আসি। বাসায় কী হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’