রাবিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পরিযায়ী পাখি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। সারা বছরই এ ক্যাম্পাস সেজে থাকে নানা রূপে। আর শীত আসলে সে রূপ বেড়ে যায় বহুগুণ। এসময় অতিথি পাখিদের আগমণে যেনো প্রাণে ছোঁয়া লাগে পুরো ক্যাম্পাসে। জলাশয়গুলো হয়ে উঠে পরিযায়ী (অতিথি) পাখিদের নিরাপদ বিচরণ কেন্দ্র।

বড় বড় জলাশয় (পুকুর) ও গাছগাছালিতে নিরাপদ আবাসস্থল ও পর্যাপ্ত খাবারের জন্য প্রতি বছর রাবিতে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। ঠিক এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। তাই ইতোমধ্যেই ঝাঁকে-ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে ক্যাম্পাসে।

বিশ^বিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের চামপঁচা, শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরসহ বেশ কয়েকটি জলাশয়ে বসেছে কিচিরমিচির আসর। রাবির আকাশ জুড়ে তারা উড়ে বেড়াচ্ছে, জলকেলিতে মেতে উঠছে। পাখিদের কলকাকলি, ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ আর খুনসুটিতে যেনো মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।

কিছু পাখি ডুবসাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে, এ ডাল থেকে ও ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পুকুরে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সব মিলিয়ে যেনো পাখিদের মেলা বসেছে এখানে।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে প্রচ- শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতের ধকল সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে। দেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে সেসবের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি থাকে ডাঙায় বা ডালে। আরেক ধরনের পাখি থাকে পানিতে। তবে রাবির জলাশয়গুলোতে আসা বেশির ভাগ পাখিই হাঁস জাতীয়।

এদর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখিই ছোট সরালি। আর বাকিদের মধ্যে রয়েছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি। যেহেতু শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিরা আসে, তাই এসময় নৈস্বর্গীক প্রকৃতির রাবি ক্যাম্পাস অপেক্ষা করতে থাকে তাদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব অতিথি পাখি দেখে উচ্ছোসিত হন। বাইরে থেকেও অনেকে আসেন অতিথি পাখি দেখতে।

সকালবেলা শীতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকে হাটতে বের হন ক্যাম্পাসে। এসময় পাখিদের কলকাকলি আর জলকেলি মুগ্ধ করে তাদের। কথা হয় এমন একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বিলকিস খাতুন বলেন, সকাল বেলা হাটতে বের হলে অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে। আর শীতকালে অতিথি পাখিদের ডুবসাঁতার দেখার মজাই আলাদা। অতিথি পাখিরা আসাতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেনো আরো বেড়ে গেছে।

আরেক শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার বলেন, আমার হলটি পুকুরের একেবারে কাছে হওয়াতে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতেই ঘুম ভাঙে প্রতিদিন। পাখিদের কলকাকলি কখনোই বিরক্তিকর মনে হয় না। আকাশ, জলে পাখিদের উড়াউড়ি আর জলকেলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। এমন দৃশ্য দেখলে মনটাও আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুর আলম বলেন, অতিথি পাখি ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোকে মাতিয়ে রেখেছে। পাখিদের কলরবে মেতে আছে পুরো ক্যাম্পাস। অনেকেই অতিথি পাখি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। বাইরে থেকেও অনেকে দেখতে আসছে।

বাইরে থেকে ঘুরতে আসা মাহফুজুর রহমান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, অতিথি পাখি এতোদিন শুধু টিভিতেই দেখতাম। আজ রাবি ক্যাম্পাসে এসে সামনাসমনি দেখছি। এতো এতো অচেনা পাখি দেখার সুযোগ হলো। খুব ভালো লাগছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ্ রেজা বলেন, রাবি ক্যাম্পাস পাখিদের জন্য উপযুক্ত। এখানে পাখিদের কেউ বিরক্ত করে না। প্রতি বছর শীত আসলেই অতিথি পাখিরা চলে আসে। পরিয়ায়ী পাখিরা ক্যম্পাসে আসতে শুরু করে সাধারণত অক্টোবরের দিকে। তারা মার্চ পর্যন্ত থাকে এসব জলাশয়ে। কালো মানিক জোড়, ধলা মানিক জোড়, সরালি পাখিই বেশি আসে রাবি ক্যাম্পাসে। বাইরের দেশের প্রচন্ড শীত সইতে না পেরে পাখিরা আমাদের দেশে আসে। রাবি ক্যাম্পাসে আসার পেছনে আরো কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও প্রজনন ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিভিন্ন সময়ে পাখিদের আগমন ঘটে রাবি ক্যম্পাসে। পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও প্রজননের ব্যবস্থা থাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে পাখিরা ক্যম্পাসে আসে। পাখিদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বদা সতর্ক আছে।