‘আমরা যত দুঃখ পেয়েছি শত্রুরা ততটাই খুশি হয়েছে’

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করে তার দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ৮ বছরের মধ্যে এই প্রথম তেহরানে শুক্রবারের নামাজে নেতৃত্ব দিলেন আয়াতোল্লাহ খামেনি।

তিনি বলেন, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনীয় একটি বিমান ভূপাতিত হবার ঘটনাটি ব্যবহার করে ইরানের শত্রুরা জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে।

“কাসেম সোলেইমানি হত্যার ঘটনায় আমরা যতটা দুঃখিত হয়েছি, বিমান ধ্বংসের ঘটনায় আমাদের শত্রুরা ততটাই খুশি হয়েছে। তারা আমাদের বিপ্লবী গার্ড ও সশস্ত্রবাহিনীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার একটা সুযোগ পেয়ে গেছে,” বলেন আয়াতোল্লাহ খামেনি ।

হাজার হাজার মানুষের সামনে দেয়া ভাষণে তিনি গুলি করে ইউক্রেনের বিমান ফেলে দেয়াকে একটি ট্র্যাজেডি বলে বর্ণনা করেন। ওই ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগেই মার্কিন ড্রোন আক্রমণে কাসেম সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকে মার্কিন সেনাদের দুটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

ওয়াশিংটন প্রথমে বলেছিল ওই আক্রমণে কোন মার্কিন সৈন্য আহত হয়নি। পরে জানা যায়, কয়েকদিন পরে ১১ জনের মধ্যে অসুস্থতা দেখা দিলে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

সংবাদদাতারা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানে যে অস্থিরতা চলছে, সেই পটভূমিতে আয়াতোল্লাহ খামেনি তার কর্তৃত্ব জোরদার করতে চাইছেন।

এই ঘটনার দায় স্বীকার করার পরই ইরানে সর্বশেষ দফা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আয়াতোল্লাহ খামেনির কথায় স্পষ্ট, নানা অস্থিরতা সত্ত্বেও ইরানের সরকার তাদের বর্তমান ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে চায়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা যেসব দাবি জানাচ্ছে, তাদের ছাড় দেয়ার কোন ইচ্ছে কর্তৃপক্ষের নেই।

আশি বছর বয়সী আয়াতোল্লাহ খামেনি রাজধানী তেহরানের মোসালা মসজিদ থেকে তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে এই বক্তৃতা করেন।

তেহরানে শুক্রবারের জুমার নামাজে ইমামতি করার একটি প্রতীকী তাৎপর্য আছে। ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যখন জনগণকে কোন বার্তা দিতে চান, তখন তারা এই উপলক্ষটি বেছে নেন।

তবে সাধারণত এমন সব ধর্মীয় নেতাদেরই এই কাজটির দায়িত্ব দেয়া হয় – যাদের উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী বক্তৃতা দেবার ক্ষমতা আছে।

কিন্তু ইরান এখন যে অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন আয়াতোল্লাহ খামেনি নিজেই সেই দায়িত্ব পালন করলেন। আয়াতোল্লাহ খামেনির বক্তব্যে তিনি ইরানে জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন এবং মার্কিন নেতাদের তিনি ভাঁড় এবং মিথ্যেবাদী বলে নিন্দা করেন। তার ভাষণে আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্র।

জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইরানে এবং ইরাকে লাখ লাখ মানুষ তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

ইরানের রেভ্যুলিশনারী গার্ডসের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই বাহিনী ইরানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।