যশোরের মনিরামপুরে সরকারি চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার সাথে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে বিব্রত খোদ প্রশাসন।
গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে যশোরের মনিরামপুরের উদ্দেশ্যে ৫ ট্রাক সরকারি ত্রাণের চাল আসে। যার মধ্যে থেকে এক ট্রাক চাল গোডাউনে লোড না দিয়েই স্থানীয় ভাই ভাই রাইস মিলে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ৫৪৯ বস্তা চাল উদ্ধার করে এবং মিল মালিক ও ট্রাক ড্রাইভারকে আটক করে।
মনিরামপুর ফুড গোডাউনের ইনচার্জ জানান, প্রকল্পের সভাপতির নেতৃত্বে চারজন এসে ওই এক ট্রাক চাল নিয়ে যান।
তিনি বলেন, গতকাল শনিবার খুলনা থেকে ডিসপাসের চাল এসেছে ৩ ট্রাক। আর খাদ্য সহায়তার চাল এসেছে ২ ট্রাক। পুরোটাই আমি রিসিভ করেছি। পিআইসি’র সভাপতির উপস্থিতিতেই মালটা নিয়ে যায়। সেখানে ছিলেন প্রকল্পে সভাপতি ভীম কুমার যাদব, আব্দুল লতিফ, আব্দুল মান্নান ও বিকাশ রায়। তারা আমার কাছে ডিও লেটার নিয়ে এসেছিল। তারপর আমি ওটা ছাড় করিয়েছি।
বিষয়টি জানার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু আবদুল্লাহ বায়েজিদের অফিস ও বাসায় গেলেও তিনি বের হননি। এমনকি কয়েক দফায় ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে।
মনিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম জানিয়েছেন, ২৫ মার্চ সরকারি ঘোষণায় অফিস বন্ধ হওয়ার পর কাবিখা’র কোন চাল বরাদ্দ যায়নি। কালোবাজারে চলে যাওয়া চাল খাদ্য সহায়তার ছিল বলে দাবি তার।
তিনি জানান, টিআর ও কাবিখা’র যে চাল বরাদ্দ আছে এখানে, তা মার্চের ২৫ তারিখের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তারপর ২৬ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অফিস-আদালত সব বন্ধ রয়েছে। আগামী ১১ তারিখ পর্যন্ত সরকার ঘোষিত বন্ধ থাকবে। সে হিসেবে এ মুহুর্তে টিআর, কাবিখার চাল কোথাও দেয়ার সুযোগ নেই। এখন গোডাউনে খাদ্য সহায়তার ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করা হচ্ছে। এখনও তদন্ত করিনি। মাত্র অফিসে আসলাম। চাল কেনাবেচার একটা সিন্ডিকেট আছে। তারা টিআর কাবিখার চাল কেনাবেচা করে। আমাদের উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু এককভাবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে।
https://www.youtube.com/watch?v=d40ddiIdLKk
এদিকে এ ঘটনার পর শতাধিক বিক্ষুদ্ধ মানুষ উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর দাবি জানান।
তারা বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে উত্তম কুমার চক্রবর্তী সাধারণ মানুষের এ চাল নিয়ে গুদামজাত করেছে। সেই চাল ধরা পড়েছে। আমাদের দাবি একটাই, একজন জনপ্রতিনিধি যদি সাধারণ মানুষের চাল মেরে খায়, আমরা গরীব দুঃখীরা কোথায় যাব। নেতারা গরীবের বুকে লাথি মেরে চাল মেরে খাচ্ছে। আমরা না খেয়ে থাকছি। তাদের কাছে চাইলে বলছে, এর কাছে যাও, ওর কাছে যাও। আমরা আজ আসব কেন? ঘরে বসেইতো আমাদের চাল পাওয়ার কথা।
প্রাথমিকভাবে ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম পাওয়া গেছে বলে জানালেন মনিরামপুর থানার ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, ভাই ভাই রাইস মিল থেকে আমরা ৫৪৯ বস্তা চাল জব্দ করি। বস্তার গায়ে লেখা আছে সরকারি খাদ্য। পরে সেগুলো আমরা থানায় এনেছি ও মামলা করেছি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ট্রাকের ড্রাইভারকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছি। তদন্তের স্বার্থে আপাতত নাম বলছি না। তদন্ত হয়ে গেলে আমরা আপনাদের এ বিষয়ে জানাব।
উল্লেখ্য, মনিরামপুরে সরকার ঘোষিত খাদ্য সহায়তার চাল দু’দফায় ১৫ ও ১৯ টন করে বরাদ্দ এসেছে।