করোনা সংকটে জনগণের সেবায় চিকিৎসা পেশায় নামলেন ইংল্যান্ডের এমপিরা

বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আতঙ্ক তৈরি করেছে করোনাভাইরাস। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রাণহানি আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩০৪। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৯ হাজার ৯৭২ জনের। তবে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে সেরে উঠেছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৬৭ জন। এই মহামারির সংক্রমণ রোধে প্রতিটি দেশটি মরিয়া অবস্থান নিয়েছে। এবার করোনা সংকটে জনগণের সেবায় ডাক্তার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন ইংল্যান্ডের এমপিরা।

খবরটা একটু ভিন্ন হলে সত্য, যদিও আমরা এধরনের খবর শুনে অভ্যস্থ নই। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সাংসদ অর্থাৎ এমপি দেশের করোনা মহামারি জরুরী অবস্থার ‍শুরুর পর জনগণের সেবায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজে যোগ দিয়েছেন। এই এমপি’দের মধ্যে কেউ ডাক্তার কিংবা নার্স হিসেবে একসময় কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার করোনা মোকবেলায় দেশের সব ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানায়। এই দেশ ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম এমনই এক সংকটময় মুহূর্ত পার করছে যেখানে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রাণ বাচাঁতে কিংবা মৃত ব্যক্তির সৎকার সম্পন্ন করতেই যেন কূল-কিনারা হারিয়ে ফেলার উপক্রম।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনগণের সেবার জন্য সংসদে স্থানীয় একজন ব্যক্তিকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা। আর এই সাংসদ অর্থাৎ এমপি তার এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। এই এমপি অন্য সবার মতো যার পরিবার, কাজ এবং অন্যান্য দায়িত্ব আছে কিন্তু তিনি একটু ব্যতিক্রম যার জন্য সবাই তাকে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করে। তবে এই এমপি কতটুকু নিঃস্বার্থ আর তার জনগণের প্রতি দায়িত্বের পরিচয় পাবেন যখন দেশ ও জাতি কোনো সংকটময় মুহূর্তের সম্মুখীন হয়।
ব্রিটেনের কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির কয়েকজন এমপি দেশটির জনগণের জীবন রক্ষায় আবারও তাদের পুরোনো পেশায় ফিরে গেছেন। যদিও অনেক দেশে এই মহামারি মোকাবেলায় ডাক্তার-নার্সরা কাজে আসতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। দেখা গেছে, ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে করোনার চিকিৎসা প্রদানকালীন সময়ে অনেক ডাক্তার-নার্স মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েছেন। তারপরও ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই অনুপ্রেরণায় উদ্বোদ্ধ হয়ে মানবতার কল্যাণে মনুষ্য প্রাণ রক্ষায় অনেকে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।

ক্ষমতাশীন কনজারভেটিভ পার্টির সিফোর্ড এন্ড নর্থ হাইকহাম আসনের এমপি ক্যারোলিন এলিজাবেথ জনসন যিনি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর তিনি পিটারবরো সিটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী বিশেষত শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিরোধী দল লেবার পার্টির টোটিং আসনের এমপি এবং শ্যাডো মানষিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোজীনা এলিন খান যিনি একজন সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরও খন্ডকালীন ডাক্তার হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু করোনা মহামারির জরুরী অবস্থা শুরু হওয়ার পর তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে দিনের পুরোটা সময় রোগীদের সেবায় নিয়োজিত।

এছাড়া কনজারভেটিভ পার্টির লুইস আসনের এমপি এবং সহকারী হুইপ মারিয়া কারফিল্ড সম্প্রতি তার পুরোনো পেশা নার্সিংয়ে যোগ দিয়েছেন। অতীতে তিনি লন্ডনের রয়েল মারসডেন হাসপাতালে কাজ করতেন। কনজারভেটিভ পার্টির সেন্ট্রাল সাফক এন্ড নর্থ ইপসুইচ আসনের এমপি ডেনিয়াল লিয়োনার্ড জেমস পোল্টার প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘণ্টার মতো লন্ডনের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে কাজ করছেন। মূলত এমপি ডেন একজন সাইকোলজিস্ট। করোনায় আক্রান্ত রোগীদেরকে মানষিক চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে তিনি অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই ক্রান্তিকালে।

বিরোধী দল লেবার পার্টির নটিংহাম ইস্ট আসনের এমপি নাদিয়া ইদিথ হোয়াটমো তার নির্বাচনী এলাকায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ‍শুরুর সাথে সাথেই একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। নাদিয়া মাত্র ২৩ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে তিনি নটিংহামে স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করতেন। কনজারভেটিভ পার্টির ভেইল অব ক্লিড আসনের এমপি জেমস ডেভিস পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি শীঘ্রই তার এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবায় স্থানীয় হাসপাতালে কাজে যোগ দিবেন। কনজারভেটিভ পার্টির ক্রিউ এন্ড ন্যান্টউইচ আসনের এমপি ক্যারেন মুলান তার স্থানীয় এলাকায় ডাক্তার হিসেবে রোগীদের সেবায় কাজ করবেন।