রেলের বিভিন্ন প্রকল্পে হিসাবের তারতম্যে সংসদীয় কমিটির অসন্তোষ

রেলের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয়ের হিসাবের তারতম্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে মংলা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনায় আন্ডারপাসগুলোতে ‘হাই কিউব কন্টেইনার’ পরিবহনের সুবিধা কেন রাখা হয়নি সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ। বক্তৃতা করেন কমিটির সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, এবি তাজুল ইসলাম, ফজলে হোসেন বাদশা, আহসান আদেলুর রহমান, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ও খাদিজাতুল আনোয়ার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের চলমান প্রকল্পের ওপরে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে মন্ত্রণালয়কে ২০০৮ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত রেললাইন, সিট, সিগনাল ব্যবস্থা এবং প্ল্যাটফর্মসহ রেলওয়েতে যাত্রীসেবার উন্নয়নের একটি সার্বিক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এছাড়া যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন এবং খরচ হ্রাস করতে, একটি বড় প্রকল্পকে পৃথক করে জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটকে একটি প্রকল্প এবং উন্নয়ন কাজগুলোর জন্য আরেকটি প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পের যে প্রাক্কলন করা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নের সময় ঠিক থাকে না। প্রাক্কলনে যে ব্যয় ধরা হয় দরপত্রে সেটার চেয়ে কম বা বেশি দেখা যায়। এটা হওয়া উচিত নয়। তাছাড়া প্রকল্প শুরু হয় মেয়াদ শুরুর অনেক পরে। দেখা যায়, ২০১০ সালের প্রকল্প শুরুই হয়েছে ২০১৮ সালে। ফলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেড়ে যায়। এতে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়। তাই আমরা বলেছি, প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি খরচ ও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। বিষয়টি দেখার জন্য সরকারের বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ (আইএমইডি) বিভাগের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিটি বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, খুলনা হতে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এই প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। যা শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ৩০ জুন। পরে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ধরা হয়। আর সময় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

একইভাবে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১০ জুলাই মাসে। ২০১৬ সালের জুন মাসে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে তা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে।

বৈঠকে ঢাকা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনায় আন্ডারপাসগুলোতে ‘হাই কিউব কন্টেইনার’ পরিবহনের সুবিধা কেন রাখা হয়নি, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, জুরাইন রেলওয়ে ওভারপাসের উচ্চতা কম হয়েছে। ওই ওভারপাসের যে উচ্চতা তাতে হাই-কিউব কন্টেইনারগুলো পরিবহন করা যাবে না। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়বে। সমন্বয়হীনতার কারণে এরকম হয়েছে। এজন্য বিষয়টি দেখতে বলেছি। ভবিষ্যতে যেসব ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ হবে, তার উচ্চতা বা গভীরতা ঠিক রাখতে বলা হয়েছে। এছড়া সড়কপথে রেল সিগনালের স্থানগুলোতে ওভারপাস তৈরি করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।