ইন্তেফাদার সেই টগবগে তরুণ আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন

২০০২ সালের কথা। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের দ্বিতীয় ইন্তেফাদা চলছে। ১৯ বছর বয়সী টগবগে তরুণ হুসেইন মাসালমেহ তাতে অংশ নেন। ইসরাইলি দখলদারিত্ব থেকে নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় অন্যদের সঙ্গে তিনিও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

তখন ইহুদিবাদী নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয়। গত সোমবার সেই যুবকের মুক্তি মিললেও হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাকে।-খবর মিডল ইস্ট আইয়ের

বছরের পর বছর ধরে বড় ভাইয়ের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন বিলাল মাসালমেহ। হুসেইনের থেকে তিনি চার বছরের ছোট। ভাইয়ের মুক্তির দিনটি পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করে কাটাবেন— হয়তো এমনটিই ভেবেছিলেন ৩৪ বছর বয়সী এই যুবক।

কিন্তু ঘটে গেল তার বিপরীত। দুই দশকের মতো ইসরাইলি কারাগারে ছিলেন হুসেইন মাসালমেহ। অধিকৃত পশ্চিমতীরের বেথেলহেমের আল-খাদের শহরে তাদের বসতি।

ইসরাইলি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, তার মৃত্যু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

হুসেইন মাসালমেহ লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত। মারাত্মক ফুসফুস প্রদাহও আছে। এ ছাড়া আরও স্বাস্থ্য সমস্যাও রয়েছে তার। বিলাল বললেন, ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। পরিবার হিসেবে যা মেনে নেওয়া কঠিন।

তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তার হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা ও ভাই হুসেইনের ছবি। বললেন, এটা খুবই কষ্টকর অনুভূতি। ভাইয়ের মুক্তিতে আমরা আনন্দিত, কিন্তু অসুস্থ থাকায় তা উদযাপন করতে পারছি না।

আটকের পর হুসেইনকে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ নেগেব মরুভূমির নাকাব কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল তাকে।

হুসেইনের পরিবার জানায়, বছর দুয়েক আগে তিনি অসুস্থবোধ করতে থাকেন। কখনো কখনো মূর্ছা যেতেন—অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তেন।

কিন্তু বারবার হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। কারাক্লিনিক নিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ দিত। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই প্রাথমিক ওষুধ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দিত।

ফিলিস্তিনি প্রিজনারস সোসাইটির প্রতিনিধিরা জানান, হুসেইনকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ গত দুবছরে তার শরীরের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

গত ডিসেম্বরেও হাসপাতালে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি। অনেক প্রতিবাদের পর ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়। তখন তার শরীরে লিউকোমিয়া ধরা পড়ে।

ফিলিস্তিনি প্রিজনারর্স সোসাইটির মুখপাত্র আবদুল্লাহ আল-জাগহারি বলেন, হুসেইন কত বছর ধরে লিউকোমিয়ায় ভুগছেন, তা বলা কঠিন। কিন্তু এখন তা ক্যানসারে রূপ নিয়েছে।

যদি তাকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হতো; তা হলে আগভাগেই তার ক্যানসার শনাক্ত করা যেত। এতে হয়তো তাকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো।

২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইসরাইলি কারাকর্তৃপক্ষের চিকিৎসা অবহেলায় ১৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অবৈধ দেশটির কারাগারে অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

২০১৬ সাল পর্যন্ত দখলদারদের বন্দিশিবিরে ২০০ ফিলিস্তিনি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছেন। এ ছাড়া ২৫ জন ক্যানসারে—আর শারীরিক ও মানসিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন ৮৫ জন।

কারাগারের পরিবেশও মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর—জীবাণু আর কীটপতঙ্গে ভরা। মরুভূমির রুক্ষ আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এসব বন্দিশিবিরে নেই।