লিবিয়ায় বন্দি মাদারীপুরের ২৪ যুবক! নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাষার গ্রামের জনি মিয়া নামের এক ব্যক্তি লিবিয়ার মাফিয়ার কাছে বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। আজ কয়েকদিন ধরে ভিডিওটি মাদারীপুরের বিভিন্ন মানুষের ফেসবুকে ঘুরতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর গত ৫ মে ওই এলাকার দালাল জাহিদ খান ইউসুবকে আটকের পর জেল হাজতে দেওয়া হয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে চিহ্নিত করে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। দালালচক্র বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে দিনের পর দিন। অনেকেই জীবন দিতে হচ্ছে অথৈ সমুদ্রে কিংবা মাফিয়াদের হাতে। দিনের পর দিন নানা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

গত ৩ মে মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাষার গ্রামের জনি মিয়া নামের এক ব্যক্তি লিবিয়ার মাফিয়ার কাছে বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিও ভাইরালের পর ওই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আরো আটকা রয়েছে মাদারীপুরের ২৪ জন যুবক। মাফিয়ারা নির্যাতন করে সে সব ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। অনেক ভুক্তভোগীর পরিবার এ ব্যাপারে ভয়ে কথা বলছেন না। কারণ তাদের আশঙ্কা, কথা বললে বা অভিযোগ করলে মাফিয়ারা আটকদের হত্যা করবে।

নাম না প্রকাশে একাধিক এলাকাবাসী জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার চাষার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ খান ইউসুফ। সে ওই এলাকার খুব পরিচিত দালাল। সবাই তাকে এক নামে দালাল হিসেবে চিনেন। সে প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর ধরে মানব পাচারের সাথে জড়িত আছে। এ পর্যন্ত তার মাধ্যমে জেলার প্রায় তিন শতাধিক যুবক লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। যার বেশির ভাগ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালী পৌঁছেছেন। এ সব লোকজন পাঠাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। জাহিদ খান ইউসুবের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক এমন মানুষদের সংগ্রহ করা। যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রত্যেকের সাথে আট থেকে ৯ লাখ টাকা চুক্তি হয়। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করেছেন ঢাকা টু লিবিয়া। তারপর সেখান থেকে ইতালী। জাহিদ খান ইউসুবের মাধ্যমে মাদারীপুরের যে সকল লোকজন লিবিয়া গেছেন তাদের অনেকে এখনো যেতে পারেননি। তারা লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন।

সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটকা আছেন। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে নির্যাতনের শিকার হতে যাকে দেখা যাচ্ছে, তার নাম জনি মিয়া। বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চাষার গ্রামে। তবে এ ব্যাপারে তার পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে লিবিয়াতে জনি মিয়ার সঙ্গে থাকা তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। একজন হচ্ছেন হিফজু হাওলাদার। সে একই গ্রামের হাবু হাওলাদারের ছেলে। অপর দুজন হচ্ছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের সরদারকান্দি গ্রামের মো. আশাদুল খান ও মো. জাহিদুল ইসলাম। বাকি ২০ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তাদের বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়।

মাফিয়ার কাছে আটক লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার বলেন, আমি আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউসুবের মাধ্যমে গত দুমাস আগে লিবিয়া পাঠাই। তার সঙ্গে আমার আট লাখ টাকা চুক্তি হয়। দুই লাখ টাকা আমি ইতিমধ্যে তার কাছে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুদিন আগে লিবিয়া থেকে ফোন আসে, তখন জানতে পারি আমার ছেলেসহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে। আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই। এ ব্যাপারে জাহিদ খান আমাকে বলেছেন, ‘আমি আপনার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করবো।’

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান মৃধা বলেন, আমি জাহিদকে চিনি। তবে সে মানবপাচারের সাথে জড়িত তা জানাছিল না। আমার ইউনিয়নের কিছু লোকসহ মাদারীপুরের ২৪ জন লিবিয়ায় মাফিয়ার কাছে বন্দি রয়েছে, এ বিষয়ে আমি অবগত না।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা এই সংবাদটি শুনে জাহিদ খান ইউসুবকে আটক করেছি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।