এবারো বিপাকে যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা

করোনা মহামারি, লকডাউন, ট্যানারি মালিকদের খামখেয়ালীপনা আর সরকারের নজরদারিতার অভাবে এবারো বিপাকে পড়েছেন যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন পাওনা টাকা না পেলে আসছে কোরবানীতে চরম ধ্বস নামবে ব্যবসায়। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরা বিপুল পরিমাণ চামড়া ভারতে পাচার করতে পারে বলে আশংকা তাদের।

রাজারহাটের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেছেন, কোরবানী ঈদের মৌসুমে রাজারহাটে আমরা আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ কোটি টাকার পশুর চামড়া কেনাবেচা করেছি। গত ৫ বছরে তা কমতে কমতে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁচেছে। এবার একশ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও অমরা শংকিত।

চামড়া ব্যবসায়ী মো. মুরাদ হোসেন জানান, ঢাকার এক ট্যানারি মালিকের কাছে প্রায় ১০ লাখ টাকা পাবেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরেই ওই ট্যানারি মালিক তার কাছ থেকে পশুর চামড়া কিনছেন। কিন্তু টাকা সময়মত পরিশোধ করছেন না। এতে জমতে জমতে ওই টাকার পরিমাণ দশ লাখে যেয়ে ঠেকেছে।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে টাকা পরিশোধ করেনি। বলছে টাকা পাঠাবে। কিন্তু ব্যাংকতো দু’একদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে তারা প্রতি বছরই টাকা নিয়ে বাহানা করে। আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, করোনা আর লকডাউনের কারণে বিকিকিনি কমে গেছে। হাতে টাকা নেই বললেই চলে।

মহাজনরা টাকা না দিলে কেমনে চামড়া কিনবো। আর কেমনেইবা বেচবো। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালের পর থেকেই টাকা নিয়ে টালবাহানা শুরু করে ট্যানারি মালিকরা। বিষয়টি নিয়ে একাধকবার অভিযোগ তুললেও কোন কাজ হয়নি। বরংচ তারা অসহযোগিতা করেছেন।

তাদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে গিয়েছি আমরা। চামড়া না দিলে তারা আগের টাকা এখন আর ফেরত দিতে চায় না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে আর্থিক সহযোহিতা না মিলেলে এবারো পশুর চামড়া ভারতে পাচার হওয়ার আশংকা রয়েছে। ব্যবসায়ী অব্দুল মাজেদ বলেন, সরকারের নীতিমালায় চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ লোন সুবিধা নেই।

আমরা সাধারণের মত লোন নিয়ে ব্যবসা করি। তারওপর ট্যানারি মালিকদের দৌরাত্ন্য আমাদেরকে পঙ্গু করে দিয়েছে। যখন আমরা চামড়া কিনতে পারবো না, তখন সুযোগ নিবে কালোবাজরীরা। রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মালেক বলেন , বাংলাদেশে চামড়ার যে দাম সরকার নির্ধারণ করে দেয় , তার চেয়ে ভারতের বাজারে এর দাম ফুট প্রতি ১৫-২০ টাকা বেশী থাকে।

স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক লোকসান এড়াতে অনেকেই এখন আর ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে চায় না। ওই চামড়া পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় সীমান্ত পথে পাচার হয়ে যায়। এবার যে পরিস্থিতি তাতে এ শংকা আরো বাড়ছে। রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ও হাট ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, সরকারসহ সবাই বলে ট্যানারি মালিকরা টাকা দিয়েছে।

কিন্তু কেউ কি কখনো খোঁজ নিয়েছে আমরা টাকা পেয়েছি কি-না? ঈদের আগে পরে কিছু দিন এ নিয়ে খুব হৈচৈ হয়। এরপর সব শেষ। আমরা বছরের এই সময়টা (কোরবানীর ঈদ) সবচেয়ে বেশী চামড়া কিনে থাকি। আর সারা বছর এটি দিয়েই চলতে হয়। গত কয়েক বছর ধরেই এ ব্যবসা খুব মন্দা যাচ্ছে।

এই হাটের সাথে প্রায় তিন হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে জড়িত। কিন্তু ব্যবসা মন্দা থাকায় এখন এখানে ৫শ’ মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, চামড়া শিল্প রক্ষায় সরকারের সুষ্পষ্ট নীতিমালা করতে হবে। সেইসাথে তা বাস্তবায়ন ও তদারকি করতে হবে। নাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ শিল্পটি একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।