হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত অরুণিমা

চারিদকে শুধু পাখি আর পাখি। যতদুর চোখ যায় শুধুই পাখির ওড়াউড়ি। হাজারো পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ডানামেলার দৃশ্যপট মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। গাছের ছায়ায় পাখির মায়ায় আবেগে আপ্লুত হবেন সবাই।

বলছি-অরুণিমা রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ ক্লাবের কথা। এখানে অতিথি পাখির সাথে দেশি পাখির মিতালি, এ যেন বন্ধুত্ব পরায়ণ বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। অরুণিমার সুবাধে আশেপাশের গ্রামগুলোও এখন পাখিগ্রামে পরিণত হয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।

শীত মওসুমের শুরুতেই বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি ও দেশি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নড়াইলের নড়াগাতী থানার পানিপাড়ার অরুণিমা রিসোর্টসহ আশেপাশের গ্রামগুলো। এক যুগ (১২ বছর) ধরে এখানে অতিথি পাখির সাথে দেশি পাখির বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

সূর্য্যমিামা ওঠার সময় পাখি যেমন অরুণিমার নীড় ছেড়ে যায়, তেমনি বিকেল ৪টা গড়ালেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসে তাদের সেই (অরুণিমা) আবাসস্থলেই। তখনই শুরু হয় ভালোলাগা, ভালোবাসার প্রতিক্ষণ।

এরই মধ্যে দলধরে এক রঙের পাখি আকাশে উড়ে বেড়ায়। অনেক দল অরুণিমার লেকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোতে বসে ডানা ঝাপটায়। এসব দৃশ্য সত্যিই ভালোলাগার, বর্ণনাতীত।

পাখি দেখার পাশাপাশি অরুণিমার প্রায় ৫২ একর বিশাল জায়গা জুড়ে গাছপালা, ফুল ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর পর্যটকরা ছুটে এসেছেন এখানে।

গাছের ছায়ায় পাখির মায়ায় মুগ্ধ সবাই। খুলনা থেকে অরুণিমা রিসোর্টে ঘুরতে আসেন সরকারি বিএল কলেজের দর্শন শেষবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা খাতুন তন্বী। তিনি জানান, প্রকৃতির মাঝে আনন্দ উপভোগের অন্যতম স্থান হচ্ছে অরুনিমা। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যই এখানে আছে।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সাংবাদিক মুজাহিদ শুভ বলেন, অরুণিমা রিসোর্ট হচ্ছে একের ভেতর শত অনুসঙ্গের সমাহার। পাখি ও প্রকৃতির টানে অরুণিমায় এসেছি। দ্বিতীয়বার আসা হলো এখানে। নাইম আবির বলেন, ভিডিও এবং ফটোগ্রাফি আমার শখ। অরুণিমার যেখানে দাঁড়াই, সেখানেই ছবিতোলার ফ্রেম হয়ে যায়।

এখানে এসে কাছ থেকে পাখি দেখা সত্যিই আনন্দের। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রযোজক (প্রডিউসার) মুহতাসিম বিল্লাহ বলেন, অনেক জায়গায় পাখি দেখার সুযোগ পেয়েছি।

এক্ষেত্রে পর্যটকদের সাথে অরুণিমার পাখিগুলোর সখ্যতা বেশি যেন। এখানে অনেক মানুষের আনাগোনাসহ কাছ থেকে ছবি তোলা হলেও পাখিগুলো ভয়ে দিক-বেদিক ছোটাছুটি করে না। দুইবার আসা হলো এখানে।

অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ বলেন, নিরাপদ অভয়াশ্রম হিসেবে এক যুগ ধরে দেশি-বিদেশি হরেক রকম পাখির বিচরণ এখানে।

বিশেষ করে হরেক রকম অতিথি পাখির সাথে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখির মিতালি, যেন বন্ধুত্ব পরায়ণ বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। তাই অরুণিমাসহ আশেপাশের মায়াবী পরিবেশ পাখির নিরাপদ আবাসস্থল।

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর পর্যটকরা আসছেন এখানে। অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় আট মাস যাবত অতিথি পাখিসহ সারাবছর দেশি পাখির আনাগোনা থাকে এখানে।

পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম খ্যাত অরুণিমার সৌন্দর্য ও ঐহিত্য ধরে রাখতে গ্রামবাসীসহ রিসোট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

পাখি দেখার সুবিধার্থে সুবিশাল লেকের মাঝে এবার বোটআইল্যান্ড করা হয়েছে। এছাড়া লেকের পাশে দাঁড়িয়ে এবং বোটযোগে (নৌকা) কাছ থেকেই পাখির দেখার সুযোগ রয়েছে অরুণিমাতেই।