মালদ্বীপে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানালেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা

মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের অষ্টম তম রাষ্ট্রদূত রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসানকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ৬ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৮ টায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হল রুমে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রিয়ার এডমিরাল নাজমুল হাসানকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।

শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত এবং মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা তাজুল ইসলাম। মুনাজাতে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের পরিবারসমেত দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন।

উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডাঃ জেবা উন নাহার। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সিআইপি আলহাজ্ব মো: সোহেল রানা

এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক মীর সাইফুল ইসলাম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ মুক্তার আলী এবং প্রবাসী শিক্ষা উদ্যোক্তা ও মিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ মোত্তাকি।

বক্তারা বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের কূটনৈতিক দক্ষতা, গঠনমূলক, কর্মতৎপরতা, চারিত্রিক গুণাবলি এবং মালদ্বীপে বাংলাদেশি জনশক্তি বৃদ্ধি ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন।

বক্তারা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, হৃদয় ব্যথায় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বড় করুন বিদায় এ মর্মবাণী। বিদায়ের এই বেদনাবিধূর করুন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবির ভাষায় বলতে হয়, যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়।

যাওয়া আসার এ রঙ্গীন পৃথিবীতে নিয়তির এটি এক অমোঘ বিধান। ভারাক্রান্ত হৃদয়ের অত্যন্ত সুগভীরে প্রতিধ্বণিত হচ্ছে আপনার অস্তিত্বের প্রতিধ্বনি। আপনি ছিলেন, আছেন থাকবেন আমাদের স্মৃতির পাতায় পাতায়। আপনি এঁকে যাচ্ছেন যে কর্মপ্রেরণা আর ভালবাসার আলপনা,

তা আমাদের মাঝে স্মরণী বরণীয় হয়ে থাকবে। শাশ্বত, সত্য ও সুন্দরের সাধনায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ ও আপনার পথচারণায় আমাদের শিখিয়েছেন মাতৃভূমিকে সুগভীরভাবে ভালবাসার, শিখিয়েছেন,

দেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজেদেরন সর্বদা উজ্জীবিত থাকার। আপনার এই সত্য ও সুন্দরের পরম প্রকাশকে আমরা জানাই হৃদয় নিঃসৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আন্তরিক অভিনন্দন।

রাষ্ট্রদূত রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বিদায়ী ভাষণের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে আজ আমি রাষ্ট্রদূত হয়ে এখানে আসতে পেরেছি। দেশ স্বাধীন না হলে হয়তো আজ আমি রাষ্ট্রদূত হতে পারতাম না।

আর জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়ার প্রত্যয়ে আমি মালদ্বীপ আসার পর বাংলাদেশীদের উজ্জীবিত রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেছি যাতে তাঁরা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মান সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, আমি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে মালদ্বীপে যখন আসি, তখন আমাদের লোক সংখ্যা ছিল এখানে সম্ভবত এক লাখের কিছু উপরে। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ।

তিনি মালদ্বীপে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন আজ আমি এখানে সংবর্ধনা নিতে আসিনি, এসেছি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিতে। সেই সাথে প্রবাসী সাংবাদিক বৃন্দ ও গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উক্ত সংবর্ধনা মঞ্চে আরও উপবিষ্ট ছিলেন, ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশান ফর মাইগ্রেশন (IOM) প্রজেক্ট অফিসার তাবাসুম মহকদুমা, ন্যাশনাল ব্যাংক এর ডিরেক্টর মো: হান্নান খান কবির, US-Bangla Airlines-এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মোঃ শরিফুল ইসলাম,

ভিউ কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ দুলাল হোসেন, মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো আরিফুল ইসলাম, প্রবাসী ব্যবসায়ী মো: কাসেদুল ইসলাম, মো: সাবু, মো: মাজিবুর রহমান, আলিম দূরানী , মো: জহিরুল ইসলাম, মো: শরিফুল ইসলাম,

মো: নুরে আলম রিন্টু, প্রবাসী পেশাজীবি মো: শাহাজালাল শিকদার, মো: সাদেক, আবদুল্লাহ কাদের, মো.সবুর তালুকদার মো:এনামুল হক জাকির প্রমূখ্য। প্রবাসী সাংবাদিক সহ মালদ্বীপস্থ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, মালদ্বীপে বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রদূত হিসেবে রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান গত ১৭ই মার্চ ২০২০ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রদূত প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তাঁর সময়কালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন।

গতবছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সফরে মালদ্বীপে আসেন।বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের সময় দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক জোরদার হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবাসীগণ মত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে ক্রেস্ট এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে দিয়ে বিদায়ী সংবর্ধনার সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।